হাত গোটালো 'TinyOwl' পুনের কর্মীরা পেলেন ক্ষতিপূরণ

হাত গোটালো 'TinyOwl' পুনের কর্মীরা পেলেন ক্ষতিপূরণ

Saturday November 21, 2015,

4 min Read

নাটকীয়তায় ভরা টানটান ৪৮ ঘণ্টা। একদিকে পুলিস, রাজনীতির হোমড়া চোমড়াদের গলার জোড়, অবাঞ্ছিত আনা গোনা, ধুন্ধুমার হস্তক্ষেপ। আর অন্যদিকে পুনের ২৫জন কর্মচারীর ৪৮ ঘন্টার মনের জোড়। হার মানল টাইনি আউল। সংস্থা যে হাত গোটাবে সে খবর পেয়েই গিয়েছিলেন পুনের কর্মীরা। আর পাঁচটা জায়গায় সোজা হয়েছিল কর্মীছাটাইয়ের প্রক্রিয়া। কিন্তু পুনের কর্মীদের ৪৮ ঘন্টার বিক্ষোভের ম্যারাথনে মাথা নোয়াতে বাধ্য হল খাবারের স্টার্টআপ টাইনি আউল।

মালিকপক্ষ চাকরির প্রথমে কর্মীদের সঙ্গে করা চুক্তির সব শর্ত মেনে নিতে রাজি হওয়ার পর তাঁদের প্রাপ্য টাকার পুরোটাই মিটিয়ে দেওয়ার পর। টাকা ব্যাঙ্কে জমা হয়ে গিয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরই কর্মীরা দফতর ছাড়েন।

"আমাদের কতগুলি অত্যন্ত সহজ দাবি ছিল।" কর্মীরা বলছিলেন, "আমরা শুধু চেয়েছিলাম আমাদের নোটিস পিরিয়ডের সময়সীমা দ্বিগুণ করা হোক এবং অফিস পুরোপুরি বন্ধ করার আগে আমাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চূড়ান্ত সেটলমেন্টের টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হোক। আমরা টাকা না নিয়ে কোন বিশ্বাসে অফিস ছাড়তাম! পোস্ট-ডেটেড চেক নেওয়ারও কোনও প্রশ্নই ওঠে না!"

যদিও অনেক সংবাদমাধ্যমেই এই ঘটনাকে অনভিপ্রেত বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। সংস্থার কর্মচারীদের দৃষ্টিভঙ্গীতে কিন্তু বিষয়টা অন্যরকম। "আমরা সহ-প্রতিষ্ঠাতা গৌরব চৌধরীর সঙ্গে আমাদের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা করি। তিনি পুলিসকেও জানিয়েছিলেন যে তিনি অফিসে স্বেচ্ছায় রয়েছেন। আমরা কখনওই তাঁকে জোর করে আটকে রাখিনি। আমরা ওঁকে যেতে বাধা দিইনি, আমরা নিজেরা শুধুমাত্র অফিস ছেড়ে যেতে রাজি হইনি।"

image


কর্মীরা এত মর্মাহত কেন?

কর্মীদের দাবি মালিকেরা অহেতুক বহু টাকা খরচ করেছেন। পাঁচজন তরুণ কীভাবে আটমাসে ১২০কোটি টাকা খরচ করে ফেলতে পারেন সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছিলেন তাঁরা। কর্মচারীদের সঙ্গে একটু বিস্তারিত কথা বলতেই তাঁরা এই ভরাডুবির কারণ হিসেবে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরলেন:

অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ - বিভিন্ন সংস্থার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে যাঁরা খবর রাখেন তাঁদের সঙ্গে কথা বলতেই বোঝা গেল 'টাইনিআউল'-এ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল।

"মার্কেটিং-এর জন্য কতজন লোক লাগে? সেলস এবং মার্কেটিংয়ে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, একজন মানুষ যে কাজ করতে পারে তা করার জন্য সাতজনকে রেখেছিল ওই সংস্থা," বললেন পুণের একজন সিনিয়র সেলস এক্জিকিউটিভ।

বেহিসেবী খরচ - "২৫ জন মানুষের জন্য ২টি প্রিন্টার, দুটি ক্যাফে কফি ডে-র কফি মেশিন এবং বহু অপ্রয়োজনীয় জিনিস অফিসে ছিল। আমাদের দুটি অফিস ছিল যেগুলিকে একত্রিত করলে ১০০রও বেশি মানুষের বসতে পারার জায়গা হতো। ওঁরা কি বুঝতে পারেননি যে এর পুরোটাই আসলে অনর্থক খরচ?" বললেন এক কর্মী।

গ্রাহক টানতে অযৌক্তিক অর্থনীতি - "তাঁরা যা ফিরে পাবেন তার থেকে অন্তত ২০০ গুণ বেশি খরচ করছিলেন। অন্য বড় শহরের মতো করে বাজেট ঠিক করছিলেন পুণের জন্য। এর কি কোনও অর্থ হয়? পুরোটাই নষ্ট!" জানালেন 'টাইনিআউল' এর এক প্রাক্তন কর্মী, যাঁকে সেপ্টেম্বর মাসে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি ওই শহরেরই অন্য একটি ফুডটেক স্টার্ট আপে কাজ করছেন।

এই পুরো ঘটনাটিকে ভারতীয় স্টার্ট আপ সিস্টেমের বিনিয়োগকারীরা এক একজন এক এক ভাবে দেখছেন। 

"ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। যদিও এর ফলে প্রত্যেক সংস্থার প্রয়োজন সম্পর্কে নিশ্চিত করে কয়েকটি ধারণা করা যায়। কোনও সংস্থা সফল হোক বা না হোক, প্রত্যেকেরই উচিত কর্মচারীদের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা," বলছেন ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ায় আইডিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর জয়দীপ মেহতা।

"নিঃসন্দেহে, টাইনিআউলের মতো স্টার্ট আপ-এর হিউম্যান রিসোর্স-এর মতো বিষয় কীভাবে পরিচালনা করা উচিত সেই সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। কিন্তু এটা এমন একটা বিষয় যা চাইলেই সমাধান করা যায়। তাঁদের জন্য যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলে আসন্ন ভবিষ্যৎ। নিজেদের শক্তিগুলিকে সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত না করেই বৃহত্তর বাজারের দিকে এগোতে চাইছে এইসব সংস্থা। সেই বিষয়টাতে নজর দিতে হবে। তাঁদের সংস্থায় অনেকে বিনিয়োগ করেছে, সেটাই তো তাঁদের টিমের দক্ষতা সম্পর্কে অনেক কথা বলে দেয়," মত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষস্তরের বিনিয়োগকারীর। তিনি আরও বলেন,"ঘটনাচক্রে সকলেই টাইনিআউল এবং ফুডপান্ডার ঘটনাকে তুলে ধরে, খাদ্য প্রযুক্তির দুনিয়ার অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছেন। অথচ এমন বেশ কিছু সংস্থা রয়েছে যাঁরা খুব ভালো কাজ করছেন, যাঁদের অহেতুক ছাড় দেওয়ার প্রয়োজন হয় না এবং মানুষের কাছে যাঁদের নির্ভরযোগ্যতা রয়েছে। এমন একটা সময় যখন ডমিনোজ এর বাজার বেশ খারাপ তখনই কিন্তু সুইগি, ফাসস, ওলাশেফ এর মতো সংস্থা তরতরিয়ে এগোচ্ছে। আমি আশা করব টাইনিআউল দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এবং খুব শীঘ্রই তাদেরকে আমরা বাজারে দেখতে পাব।"

তবে পুণে শাখার শেষটা এভাবে হলেও 'টাইনিআউল'-এর দিল্লি, চেন্নাই এবং হায়দরাবাদের কর্মীরা লড়াই করেও জিততে পারেননি। মালিকপক্ষের আশ্বাসে আস্থা রাখাই এখন তাঁদের একমাত্র উপায়।

(লেখা : অপর্ণা ঘোষ ; অনুবাদ : বিদিশা ব্যানার্জী)