রঙিন মাছে রঙিন সম্ভাবনা দেখছে বাংলার বেকার যুবক যুবতীরা

রঙিন মাছে রঙিন সম্ভাবনা দেখছে বাংলার বেকার যুবক যুবতীরা

Thursday March 30, 2017,

3 min Read

চিন্টুর দুই বন্ধু। নন্টে আর ফন্টে। রাজ্যের যত গল্পগুজব, বায়না, নালিশ সব কাচের গোল জারটার সামনে দাঁড়িয়ে। নন্টে-ফন্টে আসলে দুটি গোল্ড ফিস, চিন্টুর আজকালের সর্বক্ষণের সঙ্গী। এবারের জন্মদিনে বাবা গিফট করেছেন। মা দুজনের নাম রেখেছেন নন্টে-ফন্টে। বাবা-মা দুজনেই অফিস। স্কুল থেকে ফিরে চিন্টু বন্ধুদের সঙ্গে গল্পে মজে যায়। আলো মাসির অবশ্য সুবিধেই হয় তাতে। তিন বছরের বিচ্ছুটা ওদের পেয়ে একটু যেন স্থির হয়েছে। শুধু চিন্টু নয়, ওর অনেক বন্ধুর বাড়িতে ছোট বড় নানা সাইজের অ্যাকোয়ারিয়ামে পোষ্য মাছেরা খেলে বেড়ায়। শুধু কি বাড়িতে? দোকানে, হোটেলে, মলে, সিনেমা হলে এমনকি স্কুল, হাসপাতালেও দেখা মেলে অ্যকোরিয়ামে রঙিন মাছের জলকেলি। ফলে রঙিন মাছের চাহিদাও বাড়ছে দিনদিন। বাড়ছে রঙিন মাছের চাষ করে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ। কীভাবে? চলুন শোনা যাক।

image


হাজারো বেকার যুবক-য়ুবতীকে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে এক নয়া উদ্যোগ নেওয়া হল সম্প্রতি। রানি রাসমণি মিশনের উদ্যোগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের সহায়তায় এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেছিলেন বহু যুবকযুবতী। রঙিন মাছ চাষ প্রকল্পের মাধ্যমে শুরু হয়েছে তাঁদের রঙিন স্বপ্ন বোনার কাজ। মগরাহাটের যুবক যুবতীদের হাতে কলমে কাজ শেখাতে প্রশিক্ষণ শিবির করানো হয়েছে। এরকম শিবির আরও করা হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

এই শিবির থেকে রঙিন মাছ চাষ করার পদ্ধতি যেমন শেখানো হয়েছে তেমনি শেখানো হয়েছে সেই মাছের গুণগত মান রক্ষা করা এবং রফতানি করার নানান নিয়ম কানুন। 

বাড়ির ড্রইংরুম হোক বা অফিস, বিপণির রিসেপশন। শোভা বাড়াতে অ্যাকোরিয়াম বন্দি রকমারি এমন মাছের চাহিদা দিনদিন তাই বেড়েই চলেছে। আর এই মাছের চাষকে কেন্দ্র করেই বাড়ছে কর্মসংস্থান ও স্বনির্ভরতার সুযোগ। সেই পথকেই আরও প্রসারিত করতে তৎপর নানা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। রঙিন মাছ চাষে উৎসাহ দিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন। গোটা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এই ধরণের শিবির করা হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ফলে উপকৃত হবে বিভিন্ন জেলার উদ্যোমী যুবক যুবতীরা। 

‘বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে কোয়ালিটির ওপর জোর দেওয়া হয়। ভালো রঙিন মাছের চাষ হলে সব বাজারেই তার চাহিদা রয়েছে। ব্যবসা জমিয়ে ফেলতে পারলে আর পিছন ঘুরে তাকাতে হবে না। বিদেশ থেকেও অর্ডারও আসবে’, উৎসাহ যোগালেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের আধিকারিক অমিয় কালিদহ।

‘শুধুমাত্র বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিই শুধু নয়, এরাজ্যের রঙিন মাছের বাণিজ্যের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বাড়ছে ভিন রাজ্যে রফতানির সুযোগ। সঠিক উৎপাদন করতে পারলে বাজার নিয়ে চিন্তা নেই। সেই লক্ষ্যে সঠিক পথের দিশা দেখাচ্ছে এই ধরনের প্রশিক্ষণ শিবিরগুলি’,পরামর্শ প্রশিক্ষক মিলন সাহার। উদ্দেশ্য সফল হবেই, আশবাদী প্রশিক্ষকরা। ‘পড়াশোনা শিখে চাকরি কোথায়? জুতো ক্ষইয়ে চাকরি জুটলেও সেই টাকায় সংসার চলে না। তার ওপর মাঝেমধ্যেই চাকরি যাওয়ার ভয়। আর এখানে তো নিজের ব্যবসা, নিজের রুজি। লাভও ভালই হচ্ছে। একটু প্রচার পেলেই তরতরিয়ে এগোবে’, সঠিক প্রশিক্ষণে রঙিন মাছ চাষের মাধ্যমে স্বনির্ভরতার স্বপ্নের জাল বুনছেন তরুণ ব্যবসায়ী অসিত পাল।

প্রয়োজন শুধু সঠিক দিশা দেখানো। কীভাবে রঙিন মাছের চাষ হবে, কোথা থেকে চারা সংগ্রহ করবে, চাষের পর কীভাবে বাজারজাতকরণ করা যাবে, কোন পথে চললে বাজার ধরা সুবিধে হবে, সেই পথেই এগোতে হবে। দুর্মূল্যের চাকরির বাজারে স্বনির্ভর হওয়ার ক্ষেত্রে রঙিন মাছের চাষ খুলে দেবে নতুন দিগন্ত।