গোল্ডেন বার্ডে স্বপ্ন উড়ান

গোল্ডেন বার্ডে স্বপ্ন উড়ান

Monday September 14, 2015,

3 min Read

আমার যখন ১৪ বছর বয়েস, কোনও একটা কম্পিউটার কোর্সে ভর্তি হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মায়ের সামর্থ ছিল না। সেটাই আমাকে শিক্ষা দিয়েছিল বেড়ে ওঠায় পরিবার কতটা জরুরি। একই সঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি এবং শহিদ ভগত সিংয়ের শিক্ষা আমাকে বুঝিয়েছিল মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলাম আমার মতন আরও যারা রয়েছে তাদের সাহায্য করব যাতে আমার যা পেয়ে ওঠা হয়নি, তারা যেন পায় এবং আর্থিক সঙ্গতি তাদের স্বপ্ন পূরণে যেন কোনও বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। এই ভাবনা থেকে এনজিও দ্য গোল্ডেন বার্ড ফাউন্ডেশনের জন্ম। এনজিওটি ভারতজুড়ে নিম্নবিত্তদের ছেলেমেয়ের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করে।

image


একটা অনাথ আশ্রমে গিয়ে প্রথম আমার এনজিরওর ভাবনা আসে। ওদের অবস্থা দেখে সেদিনই ঠিক করে নিই অনাথ শিশুগুলিকে সাহায্যের চাইতে বেশি কিছু করতে হবে এবং কোনও সংস্থার মাধ্যমে অসহায় মুখগুলির পাশে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু ভাবলেই তো হবে না। আমার ইচ্ছে এবং এনজিওর মধ্যে চ্যালেঞ্জের একটা শক্ত দেওয়াল দাঁড়িয়ে ছিল। তখন আমার বয়স মাত্র ১৫। বুঝতে পারছিলাম ওই বয়সে এত বড় একটা ভাবনা নিয়ে যার কাছেই যাই বেশিরভাগের কাছে অসম্ভব ঠেকবে। জানতাম, আইনি পর্যায়ে কাগজপত্র তৈরি করতে গিয়েও আমি আটকে যাব। যখনই নিজের ভাবনার কথা আমার চারপাশের লোকজনকে বলেছি বিদ্রুপের শিকার হয়েছি, তাও দমে যাইনি। দ্বিতীয় ভোগান্তি ছিল এনজিও শুরু করার জন্য টাকার যোগান নিয়ে।

না আমার নিজের কোনও আয় ছিল, না ধনী বাড়ির সন্তান ছিলাম যে চাইলেই প্রজেক্টটা শুরুর জন্য টাকা পাব। একটাই রাস্তা ছিল, ওই ১৫ বছর বয়সেই যেভাবেই হোক রোজগারের রাস্তা বের করতে হবে। তিকোণা, একটা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার। এখানেই কাজ শুরু করি। বাড়ির দরজায় দরজায় গিয়ে সেলসম্যানের কাজ ছিল। খুব ছোট্ট কাজ, অনেকে অবজ্ঞা করত বটে।কিন্তু আমার স্বপ্নের এনজিও করতে ওইটুকুনিই আমার জন্য যথেষ্ট ছিল। জানতাম, এই সময় ঠিকঠাক লোকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটাও খুব জরুরি । দিল্লিতে এক অ্যাডভোকেটের সঙ্গে আলাপ হয় যিনি আমার এনজিওর রেজিস্ট্রেশন এবং অন্যান্য কাগজপত্র করিয়ে দেওয়ার জন্য তৈরি ছিলেন। কিন্তু দিল্লি যাওয়া এবং সেখানে থাকার ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। নিজের জায়গায় ফিরে এলাম। নিজের শহর ইন্দোরে সাহায্য পাওয়ার একটা ব্যবস্থা করে ফেললাম। লড়াইয়ের রাস্তা কঠিন এবং দীর্ঘ ছিল। কিন্তু শেষটা ভালোই ছিল। ২ বছর পর কাগজে কলমে আমার এনজিও হল এবং প্রথম ক্যাম্পেইনও শুরু হয়ে গেল।

১.সাফল্যের সঙ্গে বাচ্চাদের জন্য নিখরচার কম্পিউটার শিক্ষা প্রজেক্ট (PARAM) চালিয়েছি।

২.মহিলাদের সাহায্যের জন্য আমাদের প্রজেক্ট (AARYAA)মূলত পোশাক তৈরি এবং নানা ফ্যাশন শোর আয়োজনের মাধ্যমে সেগুলি বিক্রির ব্যবস্থা করি আমরা। ফ্যাশনশোর মাধ্যমে মহিলাদের তৈরি পোশাকের প্রচারও হয়।

৩.রক্তদান শিবির, বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষা এইসব নানা বিষয়ে স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করছি যার মাধ্যমে বহু গরিব মানুষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যাপারে অনেক সাহায্য পেয়েছেন।

৪.সাইক্লোথোন ছিল আরও একটা অভাবনীয় প্রোজক্ট যার মাধ্যমে সাইকেল ম্যারাথনের আয়োজন করে পরিবেশ সচেতনতা তৈরি করেছিলাম। দারুণ সফল হয়েছিল ওই প্রজেক্টটিও।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে নানা ইভেন্টের মধ্যে দিয়ে এনজিওর জন্য ফান্ড জোগাড় করা এবং এই বছর আমরা ভিত শক্ত করার জন্য এনজিও রেজিস্ট্রশন এবং ট্যাক্স ট্রানজিট সার্টিফিকেট নিয়ে কাজ করব। নানা কর্পোরেট সামাজিক সংস্থার সঙ্গে টাই-আপ করে নানা ইভেন্টের আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে, যার মাধ্যমে এনজিওর প্রচারও হবে।

আমাদের সংক্ষিপ্ত মতাদর্শই আমাদের শক্তি। সহজ সরল অথচ নির্দিষ্ট লক্ষভেদী ইভেন্টের আয়োজন করে সঠিক ফল দিই। ইভেন্টের মাধ্যমে দ্য গোল্ডেন বার্ড ফাউন্ডেশন কোনও দান বা ফান্ডের টাকা জোগাড় করে না। এনজিওর মাধ্যমে আমরা যে পরিষেবা দিয়ে থাকি সেটা কোনও নাম করা সংস্থা থেকেই আসে। কারণ শুধু সাহায্য করার জন্যই কাজ করা নয়, আমরা সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করি। এনজিওর মাধ্যমে সেটাই আমরা দিই, যেটা নিজেরা পেতে পছন্দ করি।

লেখক আকাশ মিশ্র দ্য গোল্ডেন বার্ড ফাউন্ডেশনের মূল উদ্যোক্তা। এই আর্টিকেলে যে মত প্রকাশিত হয়েছে তা একেবারেই লেখকের নিজস্ব মত। YourStory র সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।

.