আপনার স্টার্ট-আপকে তুলে ধরার ৬ টি উপায়

আপনার স্টার্ট-আপকে তুলে ধরার ৬ টি উপায়

Sunday November 01, 2015,

5 min Read

এমন এক উপায়, যাতে আপনি চিৎকার না করলেও সবাই আপনার কথা শুনবে। সকলের নজর কাড়তে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়োজন পড়বে না। অ্যাডভার্টাইজিং অর্থাৎ প্রথাগত বিজ্ঞাপনের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন ব্র্যান্ডিং। কারণ ব্র্যান্ড ভ্যালু গড়ে তোলার অর্থই হল পরিচিতি এবং মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠা। কীভাবে? পড়ে দেখুন। আজকের দিনে কোনও স্টার্ট আপের টিকে থাকা নির্ভর করে ব্র্যান্ডিংয়ের ওপর। বিজ্ঞাপনের পিছনে খরচ করার পর আসলে কোনও লাভ হচ্ছে কি না, তা না ভেবে আপনি যদি ভাবেন, 'যাক, অন্তত আমার কোম্পানির নাম তো মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে,' তাহলে বলি, আপনি একা নন। অধিকাংশ শুরুয়াতি ব্যবসায়ীরা এভাবেই ভাবেন।

image


বিজ্ঞাপনের সুফল নিঃসন্দেহে আছে, তবে আপনি যদি সত্যিই সেই বিজ্ঞাপন দেওয়ার ফলে কত অতিরিক্ত আয় হচ্ছে, বা আদৌ তা হচ্ছে কি না, ধরতে না পারেন, তাহলে বলব আপনি বৃথাই অর্থ এবং সময় নষ্ট করছেন। কম খরচে ,কোন প্রক্রিয়ায় মার্কেটিং করলে আপনি আপনার স্টার্ট আপকে আরও বড় করে তুলতে পারেন সেকথাই আমরা তুলে ধরব এই আর্টিক্‌লে ।

প্রেস রিলিজ: সঠিক তথ্য সম্বলিত, আকর্ষণীয় প্রেস রিলিজ নিউজ চ্যানেল, সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিনে ফিলার হিসেবে কাজে লাগানো হয়। এতে আপনিও নিখরচায় আপনার সংস্থার কথা সকলের সামনে তুলে ধরতে পারেন।

প্রথমত, আপনার এবং আপনার ব্যবসা সম্পর্কে এমন কোনও তথ্য খুঁজে বের করুন যা নিউজ অর্থাৎ সংবাদ হয়ে উঠতে পারে। আপনার কাছে কি এমন কোনও তথ্য আছে যা সময়োপযোগী, নাটকীয়, দৃষ্টি-আকর্ষণকারী অথবা সাধারণ মানুষের কাজে লাগতে পারে? আপনার কাহিনী এমনভাবে তুল ধরুন, যাতে এর কোনও একটি উদ্দেশ্য সফল হয়। হয়তো আপনার সংস্থায় চাকরির জন্য কয়েকটি পদ খালি আছে। অথবা শীঘ্রই আপনি একটি ইন্টারভিউ নিতে চলেছেন। সেক্ষেত্রে সেই তথ্য সাধারণ মানুষের কাজে লাগতে পারে। কখনও প্রথম থেকে এই ধারণা রাখবেন না যে কোন ক্ষেত্রে কোন সংস্থা এগিয়ে তা সাধারণ মানুষ জানেন। কোন সংবাদসংস্থা আপনার স্টোরিতে আগ্রহ দেখাতে পারে তা ভেবে দেখুন। যদি স্থানীয় সংবাদপত্রের পাঠকেরা একটু বড় বিনিয়োগকারীদের এবং তাঁদের সংস্থার প্রতি আগ্রহী হন, তাহলে সেই সংবাদপত্র আপনার খবর নাও ছাপতে পারে। তবে সেই প্রেস রিলিজই হয়তো স্থানীয় কোনও কলেজের প্রকাশনীতে কাজে লাগতে পারে। আপনি যে সংবাদসংস্থাকে বাছবেন তা যেন অবশ্যই আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছয়। 

প্রেস রিলিজ লেখার জন্য আকর্ষণীয় লেটারহেড ব্যবহার করুন। ওপরের মার্জিন অর্থাৎ ব্যানারে আপনার সংস্থার নাম, ঠিকানা, এমন একজন কন্ট্যাক্ট পার্সন যিনি সংস্থা সম্পর্কে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন তাঁর নাম এবং তারিখ লিখুন। ব্যানারের ঠিক নিচে, মাঝখানে, ক্যাপিটাল লেটারে লিখুন ‘FOR IMMEDIATE RELEASE’। অথবা কত তারিখের পর তা প্রকাশ করতে হবে জানাতে রিলিজ আফটার ডেট লিখুন। এক লাইন ছেড়ে আর্টিক্‌লটি লিখুন। লেখা শেষে এক লাইন ছেড়ে, আর কোনও তথ্য নেই বোঝাতে '###' চিহ্ন দিন। ই-মেল, ফ্যাক্স, পোস্ট মারফত তা সংবাদমাধ্যমে পাঠিয়ে দিন। 

কোনও সংস্থা ব্র্যান্ড তৈরী করে, তবে তাকে ক্রেতারাই বাজারে টিকিয়ে রাখেন।

অনলাইন ফোরাম: আপনার গ্রাহকদের অনলাইন ফোরাম খুঁজে বের করুন। ধরুন আপনি অ্যাথলেটিক শু বিক্রি করেন। সেক্ষেত্রে এমন মেসেজ বোর্ড তৈরী করুন যাতে বিক্রি, নতুন সংগ্রহ এবং শিক্ষণীয় তথ্য তুলে ধরা যায়। বিভিন্ন স্কুল, কলেজের স্পোর্টস টিমের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং পেজে গেলেই আপনি সেইসব মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন যাঁরা নিয়মিত রানিং শু কেনেন। নিয়মিত পোস্ট করুন। একই কথা বারবার লিখবেন না। প্রয়োজনীয় তথ্যও থাকবে আবার খুব গুরুগম্ভীর ভাষায় লেখাও নয়, এধরণের বার্তা মাঝেমধ্যে পোস্ট করতে থাকুন। আপনি যদি কাজে লাগবে এমন তথ্য ক্রেতাদের দিতে পারেন তাহলে তারা আপনার উপর ভরসা রাখবে।

লক্ষ্য স্থির করতে পারলে তবেই ব্র্যান্ডের ভিত মজবুত হবে।

পার্টনারশিপ বা অংশীদারিত্ব : এক্ষেত্রে যে সংস্থা আপনার প্রতিযোগী নয় এবং যাদের টার্গেট মার্কেট এক, সেধরণের কোম্পানি বেছে নেওয়াই শ্রেয়। প্রায়শই দেখা যায় রিয়্যাল্টর এবং লেন্ডাররা যথভাবে কাজ করছেন। যেমন, কোনও স্পোর্টস শু স্টোর, খেলাধুলার সরঞ্জাম পাওয়া যায় এরকম কোনও দোকানের পার্টনার হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের খরচ এবং ক্রেতা দুটি বিষয়েই লাভ করা যায়। এই কারণেই গয়নার দোকান, ব্রাইডাল বুটিক এবং ওয়েডিং প্ল্যানাররা আজকাল একসঙ্গে কাজ করে থাকেন। ভেবে দেখুন এভাবে আপনার ব্যবসার পরিপূরক কোন ব্যবসা হতে পারে।

আপনি ঠিক কোন পরিষেবা গ্রাহককে দিতে পারেন এবং তার বিনিময়ে কী পেতে চান সেবিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। লক্ষ্য নির্দিষ্ট রাখলে তবেই এগোনো যায়। অংশীদারকে হিসেব দিয়ে বোঝান।'আমি হাইস্কুল স্পোর্টস টিমগুলির জন্য ৩০ পাতার বুকলেট ছাপাতে চাই। এর মধ্যে বিভিন্ন রানিং শু-র প্রকৃতি, কীভাবে সেরা ব্র্যান্ড বেছে নেওয়া সম্ভব এবং তাদের সারা বছরের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ক্যালেন্ডার থাকবে। আপনি যদি বুকলেট ছাপার অর্ধেক খরচ বহন করতে রাজি থাকেন তাহলে আপনি খেলাধুলার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সম্পর্কে তথ্য জানিয়ে ১৫ পাতা লিখতে পারেন। '

সহজভাবে ভাবুন: ব্র্যান্ডিং যা গড়ে তোলে, সাব-ব্র্যান্ডিং কিন্তু তা ভেঙে ফেলতে পারে।

নিজস্ব জায়গা তৈরী: আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে উৎসাহী কোনও দলকে স্পনসর করতে পারলে তা লাভজনক হতে পারে। আপনার জুতোর দোকান যদি বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতার ট্রফি খরচ বহন করে তাহলে প্রতিটি খোলায় আপনি আপনার সংস্থার ব্যানার লাগাতে পারেন। তবে আপনার কাজের সঙ্গে জড়িত নয় এমন কোনও ইভেন্ট স্পনসর করে লাভ নেই। মনে রাখতে হবে কোনও প্রতিষ্ঠিত সংস্থার জন্য একটি বিজ্ঞাপন যেভাবে কাজ করবে, একটি স্টার্ট আপের জন্য সেভাবে করবে না। কোকা-কোলার জন্য যেকোনও ইভেন্ট কার্যকর হতে পারে, কিন্তু আপনার শু স্টোরের বিজ্ঞাপন ফর্মুলা ওয়ানে দিলে তার কোনও গুরুত্ব নেই।

সঠিক যোগাযোগ অর্থাৎ কমিউনিকেশন যেকোনও ব্র্যান্ডের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ।

যোগাযোগ বজায রাখা : গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। ফলো-আপ ফোনকল থেকে গ্রাহকেরা বুঝতে পারেন কোনও সংস্থার জন্য তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ। ড্রিপ ই-মেল, টেক্সট মেসেজিং এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ক্রেতাদের সঙ্গে কম খরচে যোগাযোগ রাখা যায়। তবে এমনভাবে মেসেজ পাঠানো উচিত যাতে তা কাস্টমারের প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। বাড়ি, গাড়ির মতো বহুমূল্য জিনিস বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি কোনও ডিসকাউন্ট স্টোর চালান তাহলে কাস্টমারের ফিডব্যাকের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

একটি স্টার্ট আপ তৈরী হয় রাতারাতি। সাফল্য আসতে সময় লাগে কয়েক বছর। কিন্তু ব্র্যান্ড তৈরীতে সময় লাগে কয়েক দশক।

বিনিময় প্রথা : হয়তো এর মাধ্যমেই মিলতে পারে আপনার সমস্যার সমাধান! আপনি যদি গাড়ির ডিলার হন, তাহলে সামনের পেট্রোল পাম্পটির সঙ্গে কথা বলুন। দেখুন, আপনার দোকানের সব গাড়ির তেল সেখান থেকে ভরানোর বিনিময়ে পেট্রোল পাম্পটিতে নতুন গাড়ি প্রদর্শনীর জন্য রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন কি না। 

সঠিক ব্যবসা খুঁজে পাওয়া মুশকিল, তবে সঠিক পরিকল্পনা করতে পারলে যেকোনও ব্যবসাই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সফল হতে পারে।

এই নিয়মগুলি যদি খতিয়ে দেখে আপনার ব্যবসার কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে খুব কম বাজেটেও আপনি নিজের ব্যবসার মার্কেটিং করতে পারেন অত্যন্ত সফলভাবে।