যানযন্ত্রণায় মুম্বইকরদের সুরাহা সিটিফ্লো

যানযন্ত্রণায় মুম্বইকরদের সুরাহা সিটিফ্লো

Tuesday November 03, 2015,

3 min Read


মুম্বই শহরে কাজের দিনে অফিস যাওয়া মানে পৌঁছানোর আগেই ঘেমে নেয়ে একসা। ভিড়ে ঠাসা বাসে ঠেলাঠেলি করে যখন কর্মক্ষেত্রে পৌঁছলেন ততক্ষণে ক্লান্তি ঘিরে ধরে। ক্লান্তিকর এই যাত্রাকে বিদায় জানাতে মুম্বইয়ের রাস্তায় নেমেছে সিটিফ্লো। একটাকাও বাড়তি খরচ না করে এমন লাক্সারি ভাবাই যায় না। হাতের কাছে মওকা পেয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্টকে একরকম বাইবাই করে দিচ্ছেন মুম্বইকররা।

image


আইআইটি বম্বে গ্র্যাজুয়েট জেরিন ভেনাদ কাজ করতেন আরনেস্ট অ্যান্ড ইয়ং-এ। মুম্বইয়ের লোকাল ট্রান্সপোর্ট নিয়ে সহকর্মীদের প্রতিদিন অভিযোগ শুনে শুনে ক্লান্ত। ‘কোনও যায়গায় যাতায়াতের সমস্যা এখানকার লক্ষ মানুষের যন্ত্রণা। আমার পুরনো অফিসে যাতায়াতে দুঘণ্টা সময় লাগত। বাড়ি গিয়ে ক্লান্তিতে চোখ ঢুলে পড়ত। পরদিন ঘুম থেকে উঠে আবার সেই পুরনো রুটিন। এটা শুধু আমার বলে নয়, আমার পরিচিত প্রায় সবার রোজকার রুটিন’, বলেন জেরিন। অফিস যাতায়াতে দিনে দুবার করে ক্যাব চড়া বেশ ব্যয় সাপেক্ষ। অনেকের আবার তা ছাড়া উপায়ও নেই। একসময় জেরিন এবং তাঁর আইআইটি বন্ধুরা ভাবতে শুরু করলেন কী করা যায়। কীভাবে সমস্যার সমাধান হবে? জেরিনের মাথায় এল, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট রুটে এসি মিনিবাস চালু করলে কেমন হয়?

ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে আরনেস্ট অ্যান্ড ইয়ং-এর চাকরি ছাড়লেন জেরিন। অফিস যাতাযাতে যারা নিত্যদিন গাড়ির ঝামেলায় পড়ছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেন। যে আইডিয়া তাঁর মাথায় ঘুরছে তার সঙ্গে সহমত অনেকেই। আইডিয়া হিট হবে, এই আত্মবিশ্বাস থেকে জেরিন এবং আরও কয়েকজন বন্ধু মিলে মুম্বইয়ের রাস্তায় সিটিফ্লো নামিয়ে দিলেন। জেরিন ছাড়াও ওই দলে রয়েছেন অঙ্কিত আগরওয়াল, সুভাষ সুন্দরাভাদিভেলু, রুষভ সাহা, আদভেথ বিশ্বনাথ এবং সংকল্প কেলশিকার। পাওয়ায়ইয়ের এইস্টার্টআপের পরামর্শদাতা হাউসিং ডটকমের সহ প্রতিষ্ঠাতা অদ্বিতীয়া শর্মা। হ্যান্ডিহোমের পর এটাই তাঁর দ্বিতীয় সংস্থা যাকে পরামর্শ দিচ্ছন তিনি। ‘রিয়েল এস্টেটের মতো বাসযাত্রার সমস্যাও বিশ্বজনীন। দীর্ঘদিন ধরে এই সেক্টর নিয়ে কোনও চিন্তাভাবনা হয়নি। তাই সুযোগ পেয়ে লুফে নিয়েছি’,বলেন অদ্বিতীয়া। মুম্বইয়ের দশটি রুটে বিভিন্ন অফিস এবং রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ায় সিটিফ্লো চলাচল করে। এই রুট পশ্চিম উপনগর (মীরা ভায়ানদার, বরিভেলি, কান্দিভালি) থেকে পূর্ব উপনগরীতে (থানে,মুলুন্দ),সেখান থেকে বান্দ্রা কুরলা কমপ্লেক্স। কিছুদিন আগে আন্ধেরিও জুড়েছে ওই রুটে।

এক্কেবারে নতুন কনসেপ্ট। তাই আর্কাইভে কোনও ডেটাও নেই। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কীসের ভিত্তিতে রুট ঠিক হচ্ছে? জেরিনের উত্তর, ‘গুগুল ম্যাপ চ্রাফিক ডেটার সবচেয়ে বড় উৎস। রুট ঠিক করার সময় যেখানে লোকসংখ্যা বেশি, কর্পোরেট হাব এবং রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া এইসব ভাবা হয়। যেখানে যাতায়াতের সমস্যা সবচেয়ে বেশি সেটাই আমাদের নজরে থাকে। তাছাড়া আমাদের অ্যাপে যারা নানা রুটের পরামর্শ দেন, সেগুলোও বিবেচনায় রাখি’।

জেরিন যখন বোঝাচ্ছিলেন সিটিফ্লো কীভাবে কাজ করে, তখন আমার মনে প্রথম আসে ফণীন্দ্র সামার নাম, যিনি রেডবাস নিয়ে ঠিক এটাই করছিলেন যেটা জেরিনরা করছেন। রেডবাস অবশ্য শুধু শহরের মধ্যে চলে। সিলেক্ট রুট-সিলেক্ট টাইম-বুক রাইড এই তিন স্টেপে দ্রুত টিকিট বুকিং হয় সিটিফ্লোর। যেহেতু কোনও একজন যাত্রীর জন্য প্রতিদিন রুট পরিবর্তন করা যায় না, সেখানে তাদের অপশন রিসেন্ট রাইড। বেসরকারি বাস মালিকরা শহরের মধ্যে এত রুট পান না। বেশিরভাগই শহরের মধ্যে বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের আনা নেওয়া করে। এই বাসমালিকদের নানা রুটে বাস চালাতে সাহায্য করে সিটিফ্লো। দূরের কোনও ট্রিপ ছাড়া গ্রাহকদের জন্য কোনও নির্দিষ্ট সংস্থার বাস বাধ্যতামূলক নয়। ইতিমধ্যে সিটফ্লো মুম্বইয়ের ১০টি বাস অপারেটরের সঙ্গে কাজ করছে। জেরিন জানান, সংখ্যাটা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

ভারতে ট্র্যাভল এবং টুরিজমের ৪২বিলিয়ন ডলারের বাজার। পরবর্তী ১০ বছরে সেটা ১০.২ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। সিটিফ্লো ওটিএ (OTA)র মতো কাজ করে। বাজারে লড়াই করছে রেডবাস, আইবিআইবিও, ক্লার্টট্রিপ, মেকমাইট্রিপ এগুলির সঙ্গে। ইন্ট্রাসিটি বাস বুকিং এর ক্ষেত্রে আরও ৪টি সংস্থা রয়েছে। সেগুলি হল-মুম্বইয়ের আরবাস, গুড়গাঁওয়ের দুটি স্টার্টআপ শাটল এবং জিপগো। রয়েছে ওলা। ক্যাবের পাশাপাশি ওলা শাটল নামে বাস পরিষেবাও পাওয়া যাচ্ছে।

সিটিফ্লোর টিকিট প্রতি কিলোমিটার ৩ টাকা করে। বৃহৎ মুম্বই ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট (বেস্ট) এর এসি বাসের যা ভাড়া সিটিফ্লোরও তাই ভাড়া। প্রতিদিন প্রায় ১৮০০ সিট বুক হয়। জেরিন জানান, স্বল্প পুঁজিতে শুরু হলও বিভিন্ন বিনিয়োগকারী উৎসাহ দেখাচ্ছেন। আর সেটাই উৎসাহ দিচ্ছে জেরিন অ্যান্ড কোংকে।