পথ চলার ক্লেশ লাঘব করতে পথের পাশে ফলের গাছ লাগিয়ে ছিলেন ভারতের এক সম্রাট। ইতিহাস তাঁর পাঁচ বছরের মাইক্রোস্কোপিক রাজত্বকাল এখনও স্মরণে রেখেছে। কারণ আর কিছুই নয়, তার কাজই তাকে ১৫৪৫ এ মরতে দেয়নি। এখন যাকে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড বলি তার বিস্তার কাবুল থেকে চট্টগ্রাম। এর আগেও ওই রাস্তা ছিল। মৌর্য সাম্রাজ্যের আমলে নাম ছিল উত্তরাপথ। এই পথ দিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা গিয়েছেন বার্মা। গোটা উত্তরভারত ঐক্যবদ্ধ থেকেছে এই রাস্তায় দৌলতে। কিন্তু কেউ আমরা সেকথা মনে রাখিনি। আমরা জানি এই পথ শের শাহ সূরীর বানানো। কারণ রাস্তা মেরামত করা থেকে রাস্তার পাশে গাছ লাগানো, পথিকের আরামের কথা ভেবে পান্থশালা তৈরির দায় যেন বর্তে ছিল ওই সম্রাটের ওপর। সে অনেক দিন আগের কথা। কিন্তু রাজনীতি দেশ কালের সীমা পেরিয়েও মৌলিক একটি কারণে এক। সে মানুষের মুখের দিকে তাকাতে বলে। মালদহে যাওয়ার পথে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ মনে করিয়ে দিল সেই পুরনো ইতিহাস।
যাত্রা পথে ক্লান্তি এলে, পথের পাশেই পান্থশালা তৈরি করেছে সরকার। খিদে পেলে সেখানেই টুকটাক খাবার পাওয়া যাবে মধ্যাহ্নভোজন আর ঠিকঠাক নৈশভোজেরও বন্দোবস্ত আছে। কথায় বলে খেতে পেলে শুতে চায়, যদি সত্যিই চান তবে তা ও আছে। বিশ্রামের জন্য আরামদায়ক শয্যার আয়োজন আছে এই সব পান্থশালায়। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে জেলায় জেলায় এবার থেকে পাওয়া যাবে অতিথি নিবাস। নাম দেওয়া হয়েছে পথসাথী। কোথাও তৈরি হচ্ছে, কোথাও হবে, কোথাও বা হয়ে গিয়েছে। চোখ জুড়ানো পান্থশালা। সম্প্রতি মালদায় শুরু হল পথসাথীর পথ চলা।
দক্ষিণ থেকে উত্তরবঙ্গ। লম্বা যাত্রাপথে কোথাও বিশ্রামের প্রয়োজন হতেই পারে। সামান্য সময়ের জন্য হোটেল খুঁজে পাওয়া মুশকিল, খরচও অনেক। সেক্ষেত্রে ধাবা কিম্বা মোটেলই ভরসা। রাজ্য এবং রাজ্যের বাইরে বহু জায়গায় রাস্তার পাশে খানিক বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এসব খুঁজে পেতে বিশেষ সমস্যা হয় না। প্রশ্ন হল সেগুলির পরিবেশ এবং মান নিয়ে। অনেকে আবার এধরণের সরকারি আয়োজন পছন্দ করেন না। আতিথেয়তা, গুণমান নিয়ে প্রচুর অসন্তোষ থাকে। এবার রাজ্যসরকারের উদ্যোগে তৈরি পথসাথী তাদের দেবে একদম অন্য অভিজ্ঞতা। মালদার ৩৪ নং জাতীয় সড়কের পাশে নারায়ণপুরে তৈরি হচ্ছে নীল-সাদা পান্থশালা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া নাম— পথসাথী। জেলার পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মহিলাদের দায়িত্বে থাকবে এই রেস্তোরাঁ কাম অতিথিশালা। রান্নাঘর থেকে ম্যানেজমেন্ট, সব দক্ষ হাতে সামলাবেন জেলার মহিলারা। আড়াই কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হচ্ছে পথসাথী। মালদহেরটার উদ্বোধন করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। যারা দূরে যান তাঁদের জন্য শর্ট স্টে। সস্তা, ছিমছাম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাওয়া দাওয়া। ৫টি এসি ঘর রয়েছে। ১৭ জন মহিলা সবকিছু সামলাচ্ছেন।
Related Stories
Stories by YS Bengali
July 12, 2017
July 12, 2017
July 12, 2017
July 12, 2017