এক মারাঠি মৌমাছি-মানুষের গল্প

বিদেশি সুপার হিরো স্পাইডারম্যান, ব্য়াটম্য়ানদের তো সবাই চেনে, আসুন আজ আলাপ করি বি-ম্যানের সঙ্গে। এক্কেবারে ভারতীয় সুপার হিরো। মহারাষ্ট্রে থাকেন। আসল নাম শ্রীকান্ত গজভিয়ে।

এক মারাঠি মৌমাছি-মানুষের গল্প

Sunday August 23, 2015,

3 min Read

“পৃথিবীতে একটা দাগ কেটো। না হলে কেনই বা এখানে এসেছো ?”
- স্টিভ জোবস
“যখন সম্পদ সীমিত অথচ উচ্চাকাঙ্খা আকাশছোঁয়া। তখন শুধু দাগ কাটলে চলবে না। চাই বিপ্লব এবং পরিস্থিতির পরিবর্তনই হবে যার একমাত্র লক্ষ্য।”
- শ্রীকান্ত গজভিয়ে


শ্রীকান্ত গজভিয়ে

শ্রীকান্ত গজভিয়ে


আমরা কি ভাবতেও পারি,কালো হলুদ ডোরাকাটা ছোট্ট পতঙ্গ মৌমাছি তার পরাগ সংযোগ করার ক্ষমতা দিয়ে আমাদের প্রাণ চঞ্চল পৃথিবীর কি গুরুত্বপূর্ণ কাজটা করে চলেছে। জানেন কি, পৃথিবীর ৯০% মানুষের ৭০ শতাংশ খাবার পরোক্ষে জুগিয়ে থাকে মৌমাছি। কিন্তু আজ এই খাদ্যশৃঙ্খল ব্যহত হতে বসেছে। মৌমাছির বংশবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে বাস্তুতন্ত্র।

আর তাই মহারাষ্ট্রের ছেলে শ্রীকান্ত গজভিয়ে এগিয়ে এসেছেন। মৌমাছিদের বাঁচাতে খুলে ফেলেছেন একটি সংস্থা। নাম দিয়েছেন 'বি দ্য চেঞ্জ'। অন্য় রকমের শিক্ষা দেয় ওঁর সংস্থা। কীভাবে মৌমাছিদেরকে আঘাত না দিয়ে মধু সংগ্রহ করা যায়, কীভাবে মৌমাছি পুষতে হয় এসবই শেখান চাষীদের। পাশাপাশি জঙ্গলে বন্যপ্রাণের সংখ্য়া বৃদ্ধির কলাকৌশল ও শেখানো হয়।

শ্রীকান্তের দাবি চাষাবাদের পাশাপাশি মৌমাছি সংরক্ষণ করলে মধু মোম ছাড়াও আরও অনেক সুফল পাওয়া যায়। যেমন এর ফলে ২০-২০০ শতাংশ শষ্য উৎপাদন বেড়ে যায়। ব্রিটেনে এক গবেষণায় জানা গেছে যে মৌমাছিদের দ্বারা উৎপন্ন সহজাত দ্রব্য বিক্রি করে যেখানে বছরে প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড আয় হয় সেখানে মৌমাছিদের দ্বারা পরাগযোগের ফলে উৎপন্ন ফসল থেকে আয় হয় কম করে ১ বিলিয়ন পাউন্ড। অন্যান্য দেশগুলির ছবিও এক্ষেত্রে একই। মার্কিন মুলুকে ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়েছে বেশ কিছু প্রজাতির মৌমাছি। ভারত এবং ইউরোপে এরা বিলুপ্তপ্রায়। মোবাইল ফোনের কিছু ক্ষতিকারক রশ্মি এবং টাওয়ার তৈরির জন্যই মৌমাছি হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে। অন্তত এরকমটাই মনে করছেন গবেষকরা। এই পরিস্থিতিতে শ্রীকান্তের এই উদ্যোগ ভূয়সী প্রশংসা পাচ্ছে।

বছর দুই আগে কোজিকোরের আই আই এম থেকে স্নাতক হন শ্রীকান্ত। তারপর পাঁচ দিনের জন্য পুনের একটি সরকারী ইনস্টিটিউশনে মৌমাছি রাখতে শেখা অভ্যাস করতে যান। সেখানে গিয়েই মধু উৎপাদনকারীদের কাজটা ভালোবেসে ফেলেন। তিনি বলেছেন,"আমার সামনে এল কিছু মজাদার তথ্য। মৌমাছিদের সংকর পরাগযোগের ব্যাপারটাই চোখ খুলে দিয়েছিল।"


image


গত কয়েক মাসে, এই সংস্থা প্রায় পাঁচশোরও বেশী চাষীকে ট্রেনিং দিয়েছে। গ্রামের কৃষকদের বিনামূল্যে মৌমাছি সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ এবং বাক্স দিয়ে থাকে এই সংস্থা। একবার কৃষকরা শিক্ষিত হয়ে উঠলে সংস্থা পূর্বনির্ধারিত মূল্যে কিনে নেয় মধু। সংস্থার ব্যানারে পাইকারী দরে বিক্রি হওয়া মধুতে লাভবান হন চাষীরাই। তাদের মুখে ফুটে ওঠে মধুমাখা হাসি। মধু আর মোম তৈরি তো গোটা কর্মকাণ্ডের একটা ছোট্টো অংশমাত্র। মৌমাছিদের দিয়ে যে আরও কত কী করা যায় সেই সুলুকই দেন গজভিয়ে। তবে চাষীদের কাছে তাঁর অনুরোধ, মৌমাছি নিয়ে কাজকর্ম করার সময় যেন তাঁরা কীটনাশক ব্যবহার না করেন। কারণ তাতে প্রচুর পোকামাকড় মারা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পরিবেশের ভারসাম্য।

শ্রীকান্ত বলছিলেন মহারাষ্ট্রে প্রশিক্ষণের অভাব, মৌমাছি কলোনির অভাবের কথা। শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনার অর্ন্তগত করার ক্ষেত্রে নানা অন্তরায়ের কথাও বলছিলেন গজভিয়ে। মৌমাছি নিয়ে মানুষের ভিতর ভ্রান্ত ধারণা আর ভাষাগত সমস্যা যদি একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয় তাহলে অর্থের অভাব আরও বড় সমস্যা। এই সব প্রতিবন্ধকতা টপকে গেছেন শ্রীকান্ত। 

তবে কাজটা মোটেই সোজা ছিল না। বলছিলেন কীভাবে তারা নিজেরা প্রশিক্ষিত হয়েছেন, দক্ষ ব্যক্তিদের পরামর্শ নিয়েছেন আর বাইরে থেকে মৌমাছিদের কলোনি নিয়ে এসেছেন। শুরুতে চাষীদের রাজি করানোই ছিল কঠিন কাজ। কারন মৌমাছি রাখতে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করতে হয়, একটি বাক্স ৫০০০ টাকা। নতুন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে শ্রীকান্ত দেখেছেন দশ জনে এক জন চাষি রাজি হন। তবে পরে দেখা যায় একটি মৌমাছি কলোনি থেকে গড়ে ওঠে আরো দুটি। চাষিরা সাফল্য পেয়ে উৎসাহী বোধ করেন। রোজগার আরও বাড়াতে মহিলাদেরও এই কাজে যুক্ত করছে বি দ্য চেঞ্জ। তারা মধু ও মোম নির্মিত প্রসাধন সামগ্রী বানাবে।২০ জনের স্বেচ্ছাসেবী দল দুর্দান্ত কাজ করছে। ফরেস্ট পপুলেশন বিষয়টা শ্রীকান্ত গজভিয়ে একটু অন্য ভাবে ভেবেছেন।


image


অন্যান্য অনেক মৌমাছি সংরক্ষন সংস্থা আছে,তবু বি দ্য চেঞ্জ হল এক মাত্র সংস্থা যেটা চাষী ও বন্যপ্রাণ দুইয়ের সার্থেই কাজ করে। আর তারা বিশ্বাস করে সাফল্যের উদাহরণই বাড়াবে সামাজিক উদ্যোগ ও সচেতনতা।