দরমার ভাঙা ঘরে দীপিকার সোনার মেডেল

দরমার ভাঙা ঘরে দীপিকার সোনার মেডেল

Thursday February 25, 2016,

2 min Read

হুগলির চুঁচুড়া ২ নম্বর রবীন্দ্রনগরের মেয়ে দীপিকা চৌধুরী। ঘরের দরমার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ে। আর দীপিকা স্বপ্ন দেখে একদিন চাঁদ ছুঁয়ে আসবেন। বাবা রঞ্জন চৌধুরী দিনমজুর। মা বিড়ি বাঁধেন। দুজনের যা রোজগার তাতে প্রতিদিনের খাবার জোটে না। সবদিন ভাত জোটে না। মা আশপাশের খেত অথবা পুকুর থেকে কলমি তুলে আনেন। কলমি সেদ্ধ দিয়েই দিনের পর দিন পেট ভরায় পরিবার। প্রায় ভাঙতে বসা শতচ্ছিন্ন সেই দরমার ঘরে একমাত্র রুপোলি রেখা-একটা সোনার মেডেল! 

দারিদ্র দীপিকাকে পরাস্ত করতে পারেনি। ওঁর অধ্যবসায়ে আঁচড় কাটতে পারেনি। ব্যান্ডেল কোদালিয়া সংঘে নিয়মিত খো খো অনুশীলনে কোথাও এতটুকু ফাঁকি নেই। ফলও পেয়েছে মেয়েটা। অনটনের এই পরিবারে একফালি আলো বছর একুশের দীপিকা। সদ্য সাউথ এশিয়া গেমস থেকে খো-খোয় সোনা জিতে ফিরেছেন।

image


সেই ছোট্টবেলায় পাড়ার ক্লাবে খো খো প্র্যাক্টিস শুরু করেন। যে ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় সেই বাড়ির মেয়ে ক্লাবে খো খো খেলে ব্যাপারটা তখন অনেকেরই বেশ বাড়াবাড়ি মনে হয়েছিল। বাবা-মা কিন্তু হাল ছাড়েননি। আর হাল ছাড়েননি দীপিকার কোচ রাজেশ দত্ত, ছোটবেলা থেকে যার হাত ধরে একটু একটু করে শিখরে উঠে আসা। পেটে খিদে নিয়েও অনুশীলন বন্ধ হয়নি কখনও। মুখ ফুটে সে কথা বলেনওনি দীপিকা। ওঁর পাশে ছিলেন ক্লাবের সদস্য আর কোচ, যিনি বুঝতে পেরেছিলেন প্রিয় ছাত্রী কতদূর যেতে পারে। তাই হাল ছাড়েননি কখনও। যতটা যেভাবে পেরেছেন সাহায্য করে গিয়েছেন। 

পড়শোনাও চলেছে সবকিছুর পাশাপাশি। শ্রীগোপাল ব্যানার্জি কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী এই সোনার মেয়ে বলেন, ‘পড়াশোনাটা তো চালিয়ে যেতেই হবে। বাবা-মা আমার জন্য উদয়াস্ত পরিশ্রম করেন। ক্লাবও সবরকম সাহায্য করছে।’ মেয়ের সাফল্যে মা নীলুদেবী খুশি। আবার দুঃখও হয়। ‘ঠিকমতো খাবারও তুলে দিতে পারি না মেয়েটার মুখে। জানতাম ও সফল হবেই। তাই আশা ছাড়িনি কোনও দিন। মেয়ে আমার মান রেখেছে’,শাড়ির খুঁটে চোখ মুছতে মুছতে বলেন তিনি। গর্বিত বাবা রঞ্জন বাবুর মুখেও একই কথা। মেয়ের জন্য সামান্য সরকারি সাহায্যের আবেদন করছেন। সাহায্যের আবেদন করেছেন কোচ রাজেশ দত্তও। তিনি বলেন, ‘টাকার অভাবে খেলা বন্ধ করে দিতে হলে দেশ একটা প্রতিভাকে হারাবে।’

অভাব, অনটন, সাহায্য-এইসব অবশ্য দীপিকার কাছে নস্যি মাত্র। সোনার মেয়ের লক্ষ্য স্থির। সামনে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা রয়েছে। সেগুলিতে জিতে ফিরে এসে গুরুদক্ষিণা দিতে চান কোচ রাজেশ দত্তকে। দরমার ঘর ভেঙে দালান কোঠাও বানাতে চান দীপিকা।