ভাষার বাঁধা টপকে গেলেন টেকস্পার্কস প্রতিযোগীরা

ভাষার বাঁধা টপকে গেলেন টেকস্পার্কস প্রতিযোগীরা

Wednesday December 09, 2015,

3 min Read

মানুষের রোজকার সমস্যা মিটিয়ে তাঁদের জীবন বদলে ফেলার জাদুকাঠি যদি আপনার হাতে আসে তাহলে কেমন হয় বলুন তো ? সেই চ্যালেঞ্জটাই নিয়েছিল ইওরস্টোরি টেকস্পার্কস ২০১৫ হ্যাকাথন। 

২৯ অক্টোবর ষোল ঘণ্টার সেই হ্যাকাথনের উদ্দেশ্য ছিল ভাষা আর ব্যবসায়িক প্রতিবন্ধকতা দূর করার রাস্তা খোঁজা। আমাদের পার্টনার টিমচ্যাট, ডেলিহান্ট, রেভারি, লগিনেক্সট এবং এক্সোটেল এপিআই আর প্রযুক্তির মাধ্যমে হ্যাকাথনে অংশগ্রহণকারীদের ভারতের জন্য নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন তৈরির রসদ জুগিয়েছে।

image


ট্ৰ্যাক ১ : ভাষার ওপর গুরুত্ব

ভারতের স্থানীয় ভাষাভাষি মানুষের জন্য মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে রেভারি আর ডেইলিহান্টের এপিআই ব্যবহার করতে হয়েছে ডেভেলপারদের। কনটেন্ট, কমিউনিটি আর কমিউনিকেশনের মিশেলে অভিনব ভাবনা তুলে ধরে সহজ সমাধানের পথ বাতলানোই ছিল চ্যালেঞ্জ।

ট্ৰ্যাক ২: ব্যবসার ওপর গুরুত্ব

আমাদের আরও দুই পার্টনার টিমচ্যাট আর লগিনেক্সটের এসডিকে ব্যবহার করে ডেভেলপারদের বাণিজ্যিক সমস্যার সমাধান খুঁজতে হয়েছে।

ট্ৰ্যাক ২.১ : কোন কোন অ্যাপ্লিকেশন গ্রাহকদের মূল আকর্ষণ

লগিনেক্সট অ্যাড্রেস আর লংগিচুড-ল্যাটিচুডের জন্য স্যাম্পল ডেটা সরবরাহ করল।

১. বেসিক : গুগল ম্যাপস এপিআই, ওসিএম, পিটনি বোয়েসের মতো বিভিন্ন ডেটা সোর্স ব্যবহার করে নতুন অ্যাড্রেসকে লংগিচুড-ল্যাটিচুডে পরিণত করা।

আগে জিওকোড করা অ্যাড্রেসগুলির ভিত্তিতে সবথেকে উপযোগী লংগিচুড-ল্যাটিচুড বাছতে মেশিন লার্নিংয়ের ব্যবহার।

২. অ্যাডভান্সড : বিভিন্ন ডেটা সোর্স থেকে ট্র্যাফিক সংক্রান্ত সঠিক তথ্য পাওয়া এবং সঠিক ইটিএ হিসেব করা।

*বিভিন্ন স্থানীয় ভাষাকে একত্রিত করার বিষয়টিও চিন্তাভাবনা করা হল।

ট্ৰ্যাক ২.২ : ভার্টিকল সলিউশন

বিভিন্ন স্মার্ট মেসেজিংয়ের দৃষ্টান্ত থেকে নির্দিষ্ট ক্লায়েন্টের জন্য ভার্টিকল সলিউশন তৈরি করা। যেমন, http://www.teamchat.com/en/case-studies/ সাইটের কেস স্টাডিগুলি।

বিভিন্ন স্মার্ট মেসেজিংয়ের উদাহরণ থেকে জিরা, ফেসবুকের মতো এক্সটার্নাল অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে টিমচ্যাটকে একত্রীভূত করা।এই স্মার্ট মেসেজিং প্যারাডাইম থেকেই আবহাওয়ার আপডেট, রেসিপি, জোকস প্রভৃতি ইউটিলিটি বট তৈরি করা। http://www.teamchat.com/en/bot-store/ সাইটে এমন উদাহরণ পাওয়া যাবে।

* বিভিন্ন স্থানীয় ভাষাকে একত্রিত করার বিষয়টি এখানেও চিন্তাভাবনা করা হয়।

তিনটি টিম নিজের উদ্ভাবনী ক্ষমতার দেখিয়ে বিজয়ী হল :

প্রথম স্থান পেল টিম বিল্ডার্স

হ্যাকাথনের দিনই এই টিমটি গঠিত হয়। টিম বিল্ডার্স একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে যার নাম ড্র্যাগোম্যান, শব্দানুবাদের জন্য সহযোগী এই অ্যাপটি সমস্ত অ্যাপ্লিকেশনের জন্যই কার্যকরী। এর আসল উদ্দেশ্য ছিল ভাষার প্রতিবন্ধকতা দূর করা।যেমন, ওয়াটসঅ্যাপ বা হাইকে স্বচ্ছন্দ কোনও ব্যক্তি তাঁর গ্রুপের কোনও সদস্যদের থেকে স্থানীয় ভাষায় একটি টেক্সট পেলেন, যাঁরা ওই ভাষায় স্বচ্ছন্দ শুধুমাত্র তাঁরাই বার্তাটি বুঝতে পারবেন, বাকিরা কথোপকথনের অংশ থাকবেন না। প্রথমে টিম বিল্ডার্স ভেবেছিল একটি বহুভাষিক অ্যাপ তৈরি করবে। কিন্তু পরে তাদের মনে হয় বিকল্প একটি অ্যাপ দিলেও মানুষ ওয়াটসঅ্যাপ বা অন্যান্য বাজার চলতি জনপ্রিয় অ্যাপ ছাড়তে চাইবেন না।

ফেসবুকের চ্যাটহেডসের মতো ড্র্যাগোম্যানেরও পরিষেবা রয়েছে যা সবসময় স্ক্রিনে ফুটে ওঠে। যখনই কেউ স্থানীয় ভাষায় কোনও মেসেজ পাঠান তখন ওই মেসেজে ক্লিক করলেই সেটা আপনার স্বাচ্ছন্দ্যের ভাষায় অনুদিত হয়ে যায়।

আসলে ওই নির্দিষ্ট মেসেজটি রেভারি‍র যে ভাষান্তরের এপিআই রয়েছে সেখানে পৌঁছে যায় যা গুগল ট্রান্সলেটের মাধ্যমে স্ক্রিনের ইউআই বাবলে অনুদিত মেসেজটি দেখায়।

দ্বিতীয় স্থানে টিম কেওস

এই টিমটি সেইসব অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কাজ করল যেগুলি প্রয়োগের মূল মাধ্যম ইংরাজি। আর এতেই সমস্যায় পড়েন ইংরাজি না জানা গ্রাহকরা।

এমনকী গ্রাহকদের থেকে আসা অন্য ভাষার মেসেজ কীভাবে ডিকোড করবে এই অ্যাপ্লিকেশন তা নিয়েও কাজ করল এই টিম। যেমন অনলাইনে সিনেমার টিকিট বুকিং। ইংরাজি না জানা কোনও ব্যক্তি যদি সিনেমার টিকিট বুক করতে চান তবে ইংলিশ-ওনলি বুকিং অ্যাপ কাজ দেবে না।আর এখানেই প্রয়োজন পড়বে অ্যাপ ‘Akcessible’ এর।

টিম একতা তৃতীয় স্থানে

অনলাইন টিউটোরিয়াল এবং অনলাইন কোর্সের দারুণ সব সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেত কারণ সেগুলির বেশিরভাগ মাধ্যমই ছিল ইংরাজি।ভারতের আঞ্চলিক ভাষাভাষির মানুষ যাঁরা ইংরাজিতে সাবলীল নন, তাঁদের এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেনি গুগল ট্রান্সলেটও। কারণ টিউটোরিয়াল সাইট বা MOOC ওয়েবসাইটের বিষয় গুগল ট্রান্সেলেটের মাধ্যমে অনুবাদ করলে তা সঠিক হয় না। ফলে এক্ষেত্রে কাজ দেয় না গুগল ট্রান্সলেটও।

এই সমস্যা মেটাতে টিম তৈরি করল জাভাস্ক্রিপ্ট ফ্রেমওয়ার্ক, সহজে রেভারির রেস্ট এপিআই ব্যবহার করে পুরো কনটেন্টকেই পছন্দের ভাষায় অনুবাদ করা যায় এই পদ্ধতিতে। সার্ভারের প্রসেসিং প্রয়োজন হয় না বলে উপলব্ধ সাইটগুলিকে পরিবর্তন করারও দরকার পড়ে না।

এই তিন বিজয়ী দল তাদের উদ্ভাবন দিয়েই শুধুমাত্র ছাপ ফেলেনি, টেকস্পার্কস ২০১৫ র উদ্দেশ্যকেও সফল করেছে। একমাত্র প্রযুক্তিই পারে দেশের শত কোটি মানুষের জীবনযাত্রা বদলে দিতে যার সূচনা হল টেকস্পার্কসে।

(লেখক সিন্ধু কাশ্যপ, অনুবাদ শিল্পী চক্রবর্তী)