হবি থেকেই অক্সিজেন পেয়েছে রিয়ার স্টার্টআপ

হবি থেকেই অক্সিজেন পেয়েছে রিয়ার স্টার্টআপ

Friday June 03, 2016,

4 min Read

কলকাতার প্যাঁচ প্যাঁচে গরম। এক পশলা বৃষ্টি। শহরের ধুলো-কাদা। হলুদ ট্যাক্সি। ওলার নতুন কচি কলাপাতা সবুজ আর সাদার স্নিগ্ধ কম্বিনেশন। ট্রেনে এত ভিড়! বেলঘরিয়ায় উঠতেই পারলেন না আপনি! বালিগঞ্জ স্টেশনেও দুটো ট্রেন ছেড়ে দিয়ে বাসেই অফিস পৌঁছনর প্ল্যান করছেন আপনার কলিগ! রাস্তায় ফলের দোকান। মরা সাহেবের জামা পায়জামা ঝুলছে সার দিয়ে। এই তো অটো! যাহ! মিউজিকাল চেয়ার... ফস্কে গেল! এই সব রাতদিন ঠেলে গুঁতিয়ে চলা এই জনস্রোতের ভিড়ে মিশে যাওয়া একটি মেয়ের কাহিনি বলব আপনাদের। একদম আপনার পাসের বাড়ির মেয়েটির মত। দরজা খুললেই যাকে দেখতে পান। দেখুন তো চিনতে পারেন কিনা! মেয়েটির নাম রিয়া। রিয়া ব্যানার্জি। শিক্ষকতা করেন। কোথায় থাকেন বলব না। শুধু এটুকু বলব ও কলকাতার মেয়ে। আর ওঁকে খুজে পাবেন ফেসবুকে। কয়েকশ রিয়া ব্যানার্জির মধ্যে ও অনন্যা।

image


আদ্যোপান্ত শিল্পী রিয়া। আদ্যোপান্ত আন্তরিক। বন্ধুদের জন্মদিন, প্রেমে পড়া, মনখারাপ, দারুণ লাগছে... শুভেচ্ছা রইল... তুই একটি অলম্বুশ... তোমাকে চাই... ভুলতে পারব না। ভালো থেকো। এরকম অসংখ্য হাতে বানানো কার্ড বিলি করে বেড়াতেন রিয়া। ভালোবসা মানে রিয়ার কাছে আর্চিস গ্যালরি নয়। নিজেই ছবি আঁকতেন। সুন্দর করে সেই কাগজ মুড়িয়ে পৌঁছে দিতেন ওঁর ব্যাকুল হৃদয়ের কথা। বলছিলেন এই শহরের অনেকেই পেয়েছেন রিয়ার পাঠানো আন্তরিক নান্দনিক শুভেচ্ছা।

দুহাজার পনেরর জুলাই মাসে ওঁর প্রথম মগজে জ্বলে ওঠে স্বনির্ভর হওয়ার আলো। শিল্পকে কাজে লাগানোর ইচ্ছে। আর সেই মুহূর্ত থেকেই রিয়া ব্যানার্জি আর পাঁচটা মেয়ে নন। মহিলা উদ্যোগপতি।

ছোটোবেলা থেকে ছবি আঁকতে ভালোবাসতেন। কখনও মন কেমন করলেই রং তুলি নিয়ে বসে পড়তেন। সারা ঘর ছড়িয়ে থাকত ওঁর ভালোলাগা মন্দলাগার চিহ্ন। কাগজে ক্যানভাসে তো বটেই যা হাতের কাছে পেতেন তাতেই আঁকতেন। আর এভাবেই শিল্পী রিয়া বানিয়ে ফেললেন তাঁর নিজস্ব পরিচিতি। বন্ধু প্রতিবেশি এবং আত্মীয় স্বজনদের উপহার দিতেন তাঁর হাতে আঁকা কার্ড। অনেকেই যত্ন করে রেখে দিত। তাদেরই একজন একবার জানতে চাইল রিয়া কি ওদের কয়েকটা কার্ড বানিয়ে দিতে পারেন, যে গুলো ওরা কিনতে পারবে। এই শুরু হল যাত্রা। প্রিন্টেড কার্ডের ম্যারম্যারে একঘেয়ে খুব সাধারণ নয়, হাতে বানানো দুর্দান্ত সব কার্ড হটকেকের মত বিক্রি হয়ে গেল। রিয়া খুঁজে পেলেন নিজের ঠিকানা। কলকাতাই। আবেগ তাড়িত এই শহরে কার্ড দারুণ জরুরি জিনিস। মনের ভাব ব্যক্ত করার একটি ভাষা। এবার ফরমায়েস আসতে লাগল। এরকম না হয়ে যদি ওরকম হত তাহলে কেমন হত। আচ্ছা রিয়া আপনি এমন একটা এঁকে দিন যাতে মনের এই ভাব প্রকাশ পায়। অথবা আমার এই রং চাই না। ওই রংটা চাই।... রিয়া কাস্টমাইজ সার্ভিস দিতে শুরু করলেন। শুধু মাত্র ক্রেতার পছন্দ মাফিক কার্ড নয় ক্রেতার পকেটের মাপ মত কার্ড বানাতে শুরু করলেন তিনি। ফলে পছন্দের কার্ড পছন্দের দামে কিনতেও লোক ভিড় করতে থাকল। ইতিমধ্যেই রিয়া বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় স্রেফ কার্ড বানিয়ে জিতে নিয়েছেন সম্মান। 

বলছিলেন প্রথম দিকে মা ভীষণ সাহায্য করেছেন। এখনও মা-ই দারুণ প্রেরণা দেন রিয়াকে। পাশাপাশি রিয়া ওঁর এই সাফল্যের প্রতি অভিযাত্রায় অকপটে স্বীকার করেছেন তার বন্ধু এবং আগে যেখানে কাজ করতেন সেখানকার পুরনো কলিগদের কথাও। তাঁরাই রিয়াকে লক্ষ্যে অবিচল থাকার শক্তি দিয়েছেন বারংবার।

হ্যাঁ রিয়া চাকরি করতেন। এম এ পাশ করার পর একটি বেসরকারি সংস্থায় রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কাজ করতেন ও। পাঁচ মাস কাজ করে কিছু টাকা জমিয়ে ছিলেন। সেখান থেকেই মাত্র দুহাজার টাকা দিয়ে শুরু করেন তাঁর কার্ড বানানোর ব্যবসা। RBARTFX80 নামটা সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব পরিচিত। ফেসবুক পেজ মারফত বিক্রি হয় তাঁর প্রোডাক্ট। রীতিমত ব্লগও লেখেন রিয়া। সেখানে তাঁর আকা কার্ডের ছবির পাশাপাশি অন্যদের ছবির সমালোচনাও লেখেন। দুহাজার টাকায় শুরু করা ব্যবসাটা এই এগারো মাসে এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে রিয়া এখন রিটেল চেন খোলার স্বপ্ন দেখছেন। যেখানে ক্রেতারা নানান রঙিন কার্ড থেকে তাঁদের পছন্দেরটি বেছে নিতে পারবেন। শুধু কার্ড নয় নানান সামগ্রীর ওপরও রং ছবি আঁকেন রিয়া। যেমন পানীয়ের কাচের বোতলের গায়ে, ডিসের ওপর সুন্দর সুন্দর ছবি এঁকেছেন। সেগুলো বাজারে দারুণ কাটতি। কিন্তু রিটেল চেন তৈরি করতে পারলে সেখানে সামগ্রীর এই বৈচিত্র ওকে অনেকটাই এগিয়ে দেবে।

"হবিটা ছেড়ো না। আমাদের হবিই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।" সবাইকে এটাই বলতে চান রিয়া। আর বলতে চান শুরুর কোনও সময় হয় না। যদি আপনার মনে হয় আপনি ঠিক রাস্তায় যাচ্ছেন তখন আর ফিরে তাকাবেন না। এগিয়ে চলুন। এভাবেই সকলকে উদ্বুদ্ধ করতে চান রিয়া দিদিমণি। আর আমরা পথ চলতে চলতে একজন রিয়াকে খুঁজে পেয়েছি। আরও রিয়াকে খুঁজতে চলুন বেরিয়ে পড়ি।