মিতালি রাজের সচিন হয়ে ওঠার দুর্দান্ত লড়াই

মিতালি রাজের সচিন হয়ে ওঠার দুর্দান্ত লড়াই

Sunday May 08, 2016,

10 min Read

এই মেয়েটির বাবা বায়ুসেনায় কাজ করত। স্বাভাবিকভাবেই কড়া অনুশাসন ছিল বাড়িতে। মা আর ভাইও কড়া অনুশাসনে বাধা ছিলেন, কিন্তু মেয়েটি ছিল সবার থেকে আলাদা। ও ছিল আলসে। স্কুল শুরুর সময় সাড়ে আটটা হলে সে ঘুম থেকে উঠত আটটার সময়। মানে বাড়ির সবথেকে শেষে। মেয়ের এই আলসে স্বভাবে বিরক্ত হয়ে গিয়ে বাবা একটি সিদ্ধান্ত নিলেন, মেয়েকে ক্রিকেটার বানাবেন। উনি মেয়েকে ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে নিয়ে যেতে শুরু করলেন, যেখানে মেয়েটির ভাই প্র্যাক্টিস করত। মেয়েটির ভাই স্কুল স্তরে ক্রিকেট খেলত। মেয়েটি প্রথম প্রথম ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে গিয়ে স্কুলের হোম ওয়ার্ক করত, কিন্তু বাবার কথায় ক্রিকেটের ব্যাটও হাতে তুলে নেয় সে ও নেট প্র্যাকটিস শুরু করে। বাবা স্কুটারে করে ছেলে মেয়েকে নিয়ে যেতেন ক্রিকেট অ্যাকাডেমি, মেয়েও ভাইয়ের মতই মন দিতে শুরু করল ক্রিকেট প্র্যাকটিসে। পরিশ্রমের ফলও মিলতে লাগল।

image


ক্রিকেট মেয়েটির প্রথম প্রেম হয়ে উঠল। এতটাই সে ভালবেসে ফেলল ক্রিকেটকে যে ক্রিকেটকেই সে তার জীবন বানিয়ে নিল। পরিশ্রম, মনযোগ ও প্রতিভা এই তিনের জোরে ক্রিকেট মাঠে সাফল্যও পেতে শুরু করল সে। এতটাই ভাল খেলতে শুরু করল যে অনেকেই ও ভক্ত হয়ে উঠল। ময়দানে অনেক রেকর্ডও ঝুলিতে পুরতে শুরু করে সে। নিজের দেশকে অনেক ঐতিহাসিক জিতও পাইয়েছে সে। নিজের দেশে মহিলা ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করে। মহিলা ক্রিকেটের তেন্ডুলকার নামে পরিচিত হতে থাকে সে। আমরা এখানে যার কথা বলছি সে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের সুপারস্টাক মিতালি রাজ। মিতালি শুধু ভারতের সবথেকে সফল মহিলা ক্রিকেটারই নয়, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার নাম নেওয়া হয়।

মিতালির আরও একটি গল্প আছে। ছোটবেলায় ক্রিকেট ব্যাট হাতে তুলে নেওয়ার আগে সে ভরতনট্যম শিখত ও নৃত্যশিল্পী হতে চাইত। দেশে বিদেশে নিজের নৃত্যকলা প্রদর্শন করে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে চাইত। ছোটবেলা থেকেই মঞ্চে অনুষ্ঠান করা শুরু করে সে এবং দর্শক তা পছন্দও করত খুব। ক্রিকেটে ব্যস্ততা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নাচের থেকে দূরে যেতে শুরু করে সে, তবুও তার মধ্যেই সময় বের করে নাচ চালিয়ে যেতে থাকে সে। কিন্তু যখন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলতে বাইরে যেতে শুরু করে তখন নাচের অভ্যাস প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। একদিন তার নাচের গুরু তাকে বলেন নাচ বা ক্রিকেট যে কোনও একটা বেছে নিতে। অনেক ভাবনার পর মিতালি নাচ ও মঞ্চ ছেড়ে ক্রিকেটের মাঠকেই আপন করে নেয়। সেই সিদ্ধান্তের কথা বলতে গিয়ে মিতালি বললেন, সিদ্ধান্তটা কঠিন ছিল, কিন্তু ক্রিকেট আমার জীবনে এমন ভাবে মিশে গিয়েছিল যে সেটা আমার পক্ষে ছাড়া আর সম্ভব ছিল না।

ক্রিকেটার না হলে কী নৃত্যশিল্পী হতেন, এ প্রশ্নের উত্তরে এক কথায় বললেন, “হ্যাঁ, আমি যদি ক্রিকেট না খেলতাম নৃত্য শিল্পী হতাম। যখন আমি নাচ ছাড়ি তখন আমি প্রশিক্ষণ শেষে মঞ্চে যে অনুষ্ঠান হয় তার থেকে খানিকটাই দূরে ছিলাম। নিজে নৃত্যশিল্পী হতে না পারলে কী হবে, মাঠে নিজের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে বোলার ও ফিল্ডারদের ভালই নাচায়”।

ক্রিকেটের দুনিয়ায় অন্য কোনও খেলোয়াড় তার আশেপাশও আসতে পারেনি। মিতালি তার সাফল্যের কৃতিত্ব তার বাবাকেই দেয়। মিতালির কথায়, “তার বাবা চাইতেন খুব কম বয়সেই মিতালি ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট টিমের নিজের জায়গা তৈরি করে। তার ক্রিকেটার হওয়ার পিছনে বাবার অনেক পরিশ্রম রয়েছে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে সে ভারতীয় টিমে স্ট্যান্ডবাই খেলোয়াড় হিসেবে সুযোগ পায়। ১৬ বছরে প্রথম আন্তর্জাতির ম্যাচ খেলে। ২৬ জুন ১৯৯৯ তে মিল্টন কিনেস এর ক্যাম্পবেল পার্কে হওয়া এই ম্যাচে মিতালি রাজ রেশমা গান্ধীর সঙ্গে ওপেন করেছিলেন। সেই ম্যাচে মিতালি ১১৪ রান করেছিলেন। রেশমাও করেছিলেন ১০৪. আর এই ম্যাচ থেকে ভারত এক নতুন তারকা পায়। পরে মিতালি মহিলা ক্রিকেটে ওয়ান ডে তে ৫০০০ রান করা প্রথম মহিলা হন। এখন অবধি মাত্র দুজনই তা পেরেছেন।

মিতালি তাঁর প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলে ২০০২ সালে। ১৮-২৩ জানুয়ারি লক্ষ্ণৌতে খেলা এই ম্যাচে মিতালি শূন্য রানে আউট হয়ে যান। কিন্তু পরে তিনিই মহিলা টেস্ট ক্রিকেটে ২০০ রান করা প্রথম খেলোয়াড় হন। এরকম একাধিক রেকর্ডই তাঁর রয়েছে।

কিন্তু মিতালির যাত্রাপথ সহজ ছিল না। মিতালি যখন খেলা শুরু করেছিলেন তখন খুব কম লোকই জানতেন মহিলারাও ক্রিকেট খেলে। একদিকে যখন ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে, তখনই অনেকে এটা বিশ্বাসই করতে চাইতেন না যে মেয়েরাও ক্রিকেট খেলে। এবং মহিলা ও পুরুষদের খেলা একইরকম। একই মাঠ, একই প্রতিস্পর্ধা, একই চ্যালেঞ্জ। মিতালি বললেন যখন উনি ভারতীয় দলে জায়গা পান তখন উনি নিজেই জানতেন না বড় মহিলা ক্রিকেটার কে, সে কেমন দেখতে, কি রকম খেলে. তার কী কী রেকর্ড আছে। দলে জায়গা পাওয়ার পরই শান্ত রঙ্গস্বামী, ডায়নাদের সম্পর্কে জানতে পারেন তিনি। এটা সেই সময় যখন ভারতের প্রায় সব মানুষই ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেট টিমের নতুন পুরোন খেলোয়াড়দের কথা জানেন।

মিতালি বলছিলেন সেই সময় মহিলা ক্রিকেটে অত উত্সাহও পাওয়া যেত না। সেই সময় ট্রেন যাওয়ার সময়ে তাদের বড় কিট দেখে লোকে জিজ্ঞাসা করত তারা হকি খেলতে যাচ্ছে কী না। যখন তারা বলতেন যে তারা ক্রিকেট খেলতে যাচ্ছেন লোকে অবাক হয়ে যেত। শুধু তাই নয় মহিলা ক্রিকেটারদের অদ্ভুত সব প্রশ্নের মুখেও পড়তে হত। মেয়েরা কী ক্রিকেট খেলে, মহিলাদের জন্য কী নিয়ম আলাদা। মিতালির এখনও সেই দিনগুলো মনে আছে যখন ছেলেদের সঙ্গে প্র্যাকটিসে গেলে নানা কঠিন মন্তব্য শুনতে হত। ছেলেরা প্রায়ই বলত, আরে মেয়ে, আস্তে বল কর, নাহলে লেগে যাবে. এরকমই এক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মিতালি ক্রিকেটকে বেছে নিয়েছিলেন, এবং কখনই ধৈর্য্য হারাননি। হাল ছাড়েননি, প্রতিটা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেছেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিকে অনুকূল বানিয়েছেন। নিজের যোগ্যতা ও সাফল্যের মাধ্যমে মহিলা ক্রিকেটকে সম্মানজনক করে তুলতে বড় ভূমিকা থেকেছে তাঁর। যখন খেলতে শুরু করেছিলেন তখন নিজের জন্য বড় কোনও লক্ষ্য রাখেননি। ওনার উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় ক্রিকেট টিমে জায়গা পাওয়া। জায়গা পাওয়ার পর উদ্দেশ্য ছিল সেই জায়গা পাকা করা। তারপর তিনি দলের মুখ্য খেলোয়াড় হয়ে উঠতে চান। মিতালি দলের সবথেকে বড় ও মুখ্য খেলোয়াড় হওয়ার জন্য মন প্রাণ লাগিয়ে দেন। উনি জানতেন টিমে টিঁকে থাকতে হলে ওনাকে লাগাতার ভাল খেলে যেতে হবে। প্রতিবার টিমকে জেতানোর দায়িত্ব নিতে হবে।

পরে উনি ভারতীয় ক্রিকেট টিমের অধিনায়কও হন। মিতালির মতে ভাগ্যবতীরাই অধিনায়ক হতে পারেন। মিতালি বললেন, “আমি ধীরে ধীরে এগিয়েছি। এবং যেমন যেমন আমি এগিয়েছি, তেমন তেমন আমার দায়িত্ব বেড়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লক্ষ্যও থেকেছে। খেলার মান উন্নতির চ্যালেঞ্জ সবসময়ই ছিল”।

৩ মে ২০১৬ এ একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে মিতালি রাজ তাঁর জীবনের নানা গুরুত্বপূ্র্ণ ও অজানা ঘটনার কথা জানান। খোলাখুলি কথা বলেন। যে ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে মিতালি রাজ ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন সেখানেই কথা হচ্ছিল। তারই মূল অংশ এখানে দেওয়া হল।

image


প্রেরণা- মিতালি আজও তাঁর পিতা দওরাই রাজই তাঁর প্রেরণা। তিনি বললেন, বাবার জন্যও আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করি। উনি চাইতেন কম বয়সেই ভারতের জন্য খেলি। যখনই কোথাও ভাল স্কোর করি, বাবাকেই ফোন করে জানাই। বাবা খুব খুশি হন। বাবার এই খুশিই আমার প্রেরণা।

বিপদে ভরসা মা- মিতালির মা ক্রিকেট অতটা বোঝেননা। কিন্তু মিতালির কেরিয়্যার বানাতে মায়েরও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মা মিতালির জন্য অনেক ত্যাগ করেছেন। জীবনে সব বড় সিদ্ধান্তই মিতালি মায়ের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়েছেন। মিতালি বললেন, “যখনই কোনও মানসিক চাপ হয় মায়ের পরামর্শই তাঁকে পথ দেখিয়েছে। পৃথিবীর যেখানেই থাকুক, সমস্যায় পড়লে মাকেই ফোন করেন মিতালি।

সমালোচনা- ২০১৩ তে যখন মিতালির নেতৃত্বে ভারতীয় মহিলা টিম সুপার সিক্সের জন্য কোয়ালিফাইই করতে পারেনি, তখন দৌরই রাজের রাগ ছিল চরমে। উনি বেশ কিছু কঠোর শব্দও বলেন। তিনি নিজে মিতালির অধিনাকত্ব কেড়ে নেওয়ার কথা বলে। কেউ কেউ মিতালিকে ক্রিকেট থেকে অবসরও নিতে বলেন। এই বিষয় বলতে গিয়ে মিতালি বলেন, “এবিষয় বাবাই তাঁর সব থেকে বড় সমালোচক ছিলেন। আর এটাও জরুরি না যে সবাই প্রশংসাই করবে। বাবার সমালোচনা থেকেও সঠিক জিনিসগুলোকে নিয়ে উনি এগিয়ে গেছেন। মিতালি বললেন, “একজন বড় খেলোয়াড় হলে আশেপাশে সমালোচকদের থাকাটা জরুরি। সমালোচকরা না থাকলে উদ্ধত হয়ে যাওযার সম্ভাবনা থাকে। মিতালি আরও বললনে, “অকারণে সমালোচনা করার লোকও আছে। কাউকে আপনি জোর করতে পারেন না আপনার খেলা পছন্দ করতেই হবে। সবাইকে খুশি করাও সম্ভব নয়।

মহিলা ক্রিকেটে রাজনীতি- মিতালি নির্দ্বিধায় বললেন ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটে রাজনীতি হয়. অন্যান্য ক্ষেত্রে যেরকম রাজনীতি হয় মহিলা ক্রিকেটেও তাই। মিডিয়া মহিলা ক্রিকেটে বেশি উত্সাহ দেখায় না বলে সেই সব খবর বাইরে আসে না। মিতালি এও বললেন, “এই নোংরা রাজনীতির জন্যই অনেক ভাল খেলোয়াড় আসতে পারেন না। মিতালি বললেন যারা মানসিক ভাবে শক্ত তারাই এই রাজনীতির সঙ্গে লড়ে টিঁকতে পারে, কিন্তু যারা দুর্বল হয় তারা শিকার হয়। মিতালির পরামর্শ রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়তে নিজেকে শক্ত করতে হবে।

সাফল্যর মানে-মিতালির মতে পরিস্থিতিতে স্থির থেকে লক্ষ্যে পৌঁছনই আসল। তিনি মনে করেন কঠিন সময় টিমকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দেওয়াই আসল। উনি বললেন, “অধিনায়ক হয়ে আমার নিজের খেলা যদি খারাপও হয় কিন্তু অন্যদের থেকে যদি ভাল খেলা বের করে আনতে পারি, তাহলে অধিনায়ক হিসেবে সবথেকে বেশি সফল মনে করব।এখন পর্যন্ত সবথেকে বড় সাফল্য-কনসিসটেন্সিই আমার সবথেকে বড় সাফল্য। আমি যদি আজ পাঁচহাজার রান করে থাকি তার কারণ কনসিস্টেন্সি”।

সচিন তেন্ডুলকারের সঙ্গে তুলনা- মিতালি বললেন, “যখন আমাকে মহিলা ক্রিকেটের তেন্ডুলকার বলে আমার খুবই ভাল লাগে। ক্রিকেটে তেন্ডুলকারের বিরাট ভূমিকা ও উনি মহান খেলোয়াড়। এতবড় ক্রিকেটারের সঙ্গে তুলনা করলে ভালই লাগে। কিন্তু আমি চাই লোকে আমাকে আমার নামেই চিনুক. লোকে আমার অবদান আর খেলার জন্য আমাকে চিনুক”।

সাফল্যের চাবিকাঠি- পরিশ্রম ছাড়া সাফল্য পাওয়া যায় না। যদি মেয়েদের ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট টিমে জায়গা পেতে হলে পরিশ্রম করতে হবে। সাফল্য পেতে হলে নিজের প্রাথমিক লক্ষ্য স্থির করা প্রয়োজন। মিতালির মতে অনেকেই সেটা করতে পারে না। লক্ষ্য স্থির করে সেদিকে এগিয়ে যেতে হবে।

সবথেকে পছন্দের পুরুষ ক্রিকেটার- মিতালির মতে তিনি কোনও পুরুষ ক্রিকেটারের দ্বারা প্রভাবিত নন। কিন্তু রাহুল দ্রাবিড় আর সচিন তেন্ডুলকারের মানসিক শক্তি ও ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি তাঁকে প্রেরণা দেয়।

সবথেকে পছন্দের মহিলা ক্রিকেটার-তিনু ডেবিড মিতালিকে অনেক প্রভাবিত করেছেন। ডেভিড তাঁর অলটাইম ফেভারিট। তিনু ডেভিড লেফ্ট আর্ম স্পিনার ও বহুদিন ভারতের হয়ে খেলেছেন। তাঁর অসাধারণ বোলিং অনেকবার টিমকে বাঁচিয়েছে।

যে খেলোয়াড়কে ভয় পান- মিতালি বললেন, তিনি যখন খেলা শুরু করেন তখন ইংল্যান্ডে লুসি পিয়ারসন নামের একজন বোলার ছিলেন। প্রায় ৬ ফুট লম্বা এই খেলোয়াড়ের বল খুবই ভয়ানক ছিল. মিতালি লুসিকে ভয় পেতেন। হাসতে হাসতে মিতালি বললেন, “আমার সৌভাগ্য লুসি বেশিদিন ক্রিকেট খেলেনি ও তাড়াতাড়ি অবসর নিয়ে নিয়েছিল”।

জীবনের সবথেকে বড় স্বপ্ন- বিশ্বকাপ জেতা ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব করা।

জীবনের সবথেকে বড় খুশি-ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ জেতা। মিতালি বলছিলেন তিনি অধিনায়ক ছিলেন ও তাঁর টিমে ১১ জনের মধ্যে এমন একজন খেলোয়াড় ছিলেন যে প্রথমবার টেস্ট ম্যাচ খেলছিলেন। “ইংল্যান্ড একটি শক্তিশালী টিম ছিল অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিল। কিন্তু আমরা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিই। আমার জন্য অধিনায়ক হিসেবে এটা খুব বড় সাফল্য ছিল।

সবথেকে হতাশাজনক মুহুর্ত- ওয়ান-ডে আর টুয়েন্টি টুয়েন্টি ফর্ম্যাটে ভাল টিম হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বকাপ থেকে ছিটেকে যাওয়া সবথেকে খারাপ দিন ছিল।

সবথেকে খারাপ সময়-মিতালি বললেন, ২০০৩ এ যখন তিনি লাগাতার ৩টি ইনিংসে ব্যর্থ হন ও ১০ রানও করতে অক্ষম হন তখন তিনি খুব নিরাশ হন। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৪ ইনিংসে বিশেষ কিছু করতে না পারার সময়ও একই অবস্থা হয়েছিল।

হতাশ হলে কী করেন- মিতালি মানেন ব্যর্থতা সবজায়গাতেই আসে। সব পরিস্থিতিতেই ধৈর্য্য রাখা ও শান্ত থাকা জরুরি। মিতালি জানালেন তিনি সেই চেষ্টা সবসময় করেন। আর এই চেষ্টায় হতাশা দূর হয়।

জীবনের সবথেকে বড় ভয়- মিতালির সবথেকে বড় ভয় যাতে তিনি উদ্ধত আর বেপরোয়া না হয়ে ওঠেন। সেটা হলে কন্সিসটেন্সি নষ্ট হয়ে যাবে। আরও একটা ভয় আছে। ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা, প্যাশন শেষ না হয়ে যায়। এই ভয় কাটাতে একটি অদ্ভুত উপায় বেছেছেন তিনি। যখন ম্যাচ খেলার থাকে না, তখন ব্যাট স্পর্শও করেননা। এভাবে তিনি দেখতে চান তিনি নিজেকে কতদিন ব্যাট আর ক্রিকেট থেকে দূরে রাখতে পারেন। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি তাঁর এমনই ভালবাসা যে নিজেকে ক্রিকেট থেকে বেশিদিন দূরে রাখতে পারেননা তিনি।

মিতালির বিষয় অন্যান্য জরুরি তথ্য

মিতালি রাজের জন্ম ৩ ডিসেম্বর, ১৯৮২ রাজস্থানের যোধপুরে। পরিবারের সঙ্গে হায়দ্রাবাদে চলে যান তিনি. বাবা প্রথমে বায়ুসেনাতে ছিলেন, পরে ব্যাঙ্ক আধিকারিক হন।

ছোটবেলা থেকেই মিতালি নিজের ভাই ও অন্যান্য ছেলেদের সঙ্গে প্র্যাক্টিস করতেন।

মিতালি আইসিসি ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম স্থানে ছিলেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা যে এই স্থান পেয়েছেন।

মিতালি অধিনায়ক হিসেবেও অনেক ভাল খেলা খেলেছেন ও ভারতকে ঐতিহাসিক জয় এনে দিয়েছেন।

মিতালি ভারতের সবথেকে সফল ব্যাটসম্যানই শুধু নন, সবথেকে সফল অধিনায়কও বটে। মিতালি টেস্ট, ওয়ান ডে আর টুয়েন্টি টুয়েন্টি তিনটি ফর্ম্যাটেই ভারতের মহিলা টিমের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

মিতালি তাঁর সাফল্য ও ক্রিকেটে অবদানের জন্য অর্জুন পুরস্কার ও পদ্মশ্রী পেয়েছেন।

মিতালি মহিলাদের উন্নতির একটি প্রতীক হয়ে উঠেছেন এবং অনেকের জন্যই তিনি প্রেরণা।

মিতালির সাফল্য-একনজরে

(৩ মে, ২০১৬ পর্যন্ত)

মিতালি ১৬৪ টি ওয়ান ডে ম্যাচ খেলেছেন. এর মধ্যে ১৪৯ ইনিংসে ৫৩০১ রান করেছেন।

তিনি ৪২ বার নটআউট থেকেছেন যা একটি বিশ্ব রেকরণ।

মিতালি ওয়ান ডে তে পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছেন।

মিতালি ৫১ টি টোয়েন্টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৪৯৯ রান করেছেন, গড় ৩৪. ৬।

মিতালি ১০ টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ১৬ ইনিংসে ৬৬৩ রান করেছেন, গড় ৫১. তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ২১৪।