কর্পোরেট দুনিয়ায় E-শিক্ষক কলকাতার AmazAntz

কর্পোরেট দুনিয়ায় E-শিক্ষক কলকাতার AmazAntz

Monday June 27, 2016,

4 min Read

এই ওয়েব স্পাইডারের যুগে। কনটেন্টের অক্ষরগুলো কখনও কি আপনার মনে হয়েছে পিঁপড়ের সারির মতো? সরু সরু রেখা হয়ে লেখকের ল্যাপটপ থেকে ওয়েবের টানেল দিয়ে আপনার হাতের মোবাইল পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে? পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে সেইসব লাল কালো পিঁপড়েরা, মুখে ডিম নিয়ে। সেঁধিয়ে যাচ্ছে আর্কাইভের ভিতর, পৌঁছে যাচ্ছে আপনার কুকি শেলফে। এরকমই আজব একগুচ্ছ পিঁপড়ের কাহিনি শোনাবো আপনাদের। অ্যামেজ অ্যান্টজ। তিনটি অসাধারণ সৃজনশীল পিঁপড়ের সাফল্যের কাহিনি।

image


তিনটি এমন মানুষ যারা দীর্ঘ অধ্যবসায়ের মধ্যে দিয়ে নিজেদের সত্তাকে ভরসা করে এগোতে পেরেছেন। শুধু তাই নয় এই কর্পোরেট দুনিয়ায় তাঁরা সর্বত্রগামী। গত দশ বছর ধরে ই-লার্নিংয়ে রীতিমত মর্যাদা দাবি করে নিয়েছেন এই তিনমূর্তি। তিনজনই কনটেন্টের মানুষ। প্রশিক্ষণে সিদ্ধহস্ত। কোনও কঠিন বিষয় সহজ করে বোঝানোর জুরি মেলা ভার। 

ইমরান আহমেদ, অতনু চৌধুরী, অনুপম দাশগুপ্ত। তিন বন্ধু জীবনের বিভিন্ন মোড়ে এক সঙ্গে কাজ করেছেন পথ চলেছেন। অতনু মাল্টিমিডিয়া, ডিজাইনিং বিশেষজ্ঞ। ইমরান কনটেন্ট নিয়ে মাথা ঘামান। শিল্প, সৌকর্য, কারুকাজ, ভালো সিনেমা, অসাধারণ উপন্যাস, গায়ে কাঁটা দেওয়া কবিতা এসবই ওঁর ছোটবেলার প্রেম। তমলুকের স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ছবি আঁকার টান। যত বড় হয়েছেন ততই সৃজনশীলতার সঙ্গে উদ্যোগী মনকে জুড়তে চেয়েছেন। খুলেছেন ফোটোপিয়ার নামে একটি সংস্থা। তরুণ শিল্পীদের নিজেদের প্লাটফর্ম। সেখানে চাইলেই তাঁরা তাঁদের সৃজনশীল কাজগুলো শোকেশ করতে পারেন। শিল্পী, চিত্র পরিচালক, ফটোগ্রাফার এবং যেকোনও সৃজনশীল মানুষই এখানে স্বাগত। দীর্ঘ দশ এগারো বছর ধরে তিন বন্ধু একসাথে পথ চলছেন। কাজের সূত্রেই তিনজনের আলাপ। অ্যাসথেটিকা টেকনোলজিস-এ। সেখানে অনুপম ছিলেন জেনারেল ম্যানেজার। ম্যানেজেরিয়াল স্কিলই বলুন বা সংস্থা চালানোর দক্ষতা তাতে বরাবরই অনুপ মাস্টার। ওরা ভাবলেন অনেক হয়েছে অন্যদের জন্যে কাজ করা চলো বরং নিজেরা কিছু করি। ইমরান আগে থেকেই উদ্যোগী ছিলেন। ইতিমধ্যে একটি স্টার্টআপ তৈরি করে ফেলেছেন। ফলে এটা তাঁর নতুন কাপে ঢালা চা নয়। চুমুক দিলেন। সঙ্গে পেলেন অতনু আর অনুপমকেও। শুরু হয়ে গেল কাজ। প্রাণ ঢেলে নতুন কিছু করার উদ্যোগ। জন্ম নিলো AmazAntz নামে তাঁদের সংস্থা। ২০১৪ সালে যখন শুরু করেন তখন ওদের মাত্র একটি কম্পিউটার একজন কর্মচারী ছিল। আর হাতে তখন শুরু করার মতো সবে ধন নীলমণি একটি মাত্র ক্লায়েন্ট। আর এই ক'দিনে সংস্থা আড়ে বহরে দারুণ বেড়েছে। অ্যামেজ অ্যান্টজ-এ কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা কুড়ি। সংস্থার ক্লায়েন্ট ছড়িয়ে রয়েছে গোটা দেশ জুড়ে, আমেরিকাতেও রয়েছে অনেক ক্লায়েন্ট। সংস্থার চিফ একজিকিউটিভ অফিসার এবং অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ইমরান বলছিলেন, গোটা পৃথিবীতেই প্রশিক্ষণের জন্যে কনটেন্টের দারুণ চাহিদা। উত্তরোত্তর বৃদ্ধিও পাচ্ছে সেই চাহিদা। যেমন ধরুন ভারতেই স্কিল ইন্ডিয়া, PMKVY এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়ার দৌলতে চাহিদা দারুণ বাড়ছে। ২০১৮ সালের মধ্যে এই বাজার প্রায় সাড়ে সতের শতাংশ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এই বাজারটাই ইমরানদের টার্গেট।

সংস্থার ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর এবং কোফাউন্ডার অনুপম বলছিলেন ই-লার্নিং এর দুনিয়ায় তাদের অভিজ্ঞতা এবার মূল্য পাচ্ছে। তাঁরা তৈরি করেছেন ই লার্নিং এর জন্যে SIMPLE নামের একটি টুল। যার মাধ্যমে গোটা প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়াটাই জলবৎতরলং করা যায় খুব দ্রুত। যত সময় এগোচ্ছে ততই কঠিন হয়ে উঠছে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির টিকে থাকার লড়াই। নিত্য নতুন প্রযুক্তি আসছে, নিত্যই বদলে যাচ্ছে বাজারের গতি প্রকৃতি। কর্মীরা প্ৰশিক্ষিত না হলে সংস্থা এগোতেই পারবে না। এরকম পরিস্থিতিতে অনুপম-ইমরান-অতনুদের ভীষণ প্রয়োজন। সেই প্রয়োজনীয়তাটা যতই টের পাচ্ছে কর্পোরেট দুনিয়া ততই এগোচ্ছে অ্যামেজ অ্যান্টজ।

চিফ অপারেটিং অফিসার অতনু জানালেন, ওরা ওদের জ্ঞান ভাণ্ডারে যাতে টান না পড়ে সেদিকে বিশেষ যত্নশীল। বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ এবং পণ্ডিতদের সহযোগিতা নেওয়া হয় প্রয়োজনে। গবেষণার ভিতর দিয়ে প্রতিনিয়ত নিজেদের টিমকে আপগ্রেড করা হয়। কোনও লার্নিং প্রসেসকে দুর্দান্ত সহজ গ্রাফিক্স দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়ার নানান প্রক্রিয়া নিয়েও চলে রাতদিন গবেষণা। সৃজনশীল উদ্ভাবনী ক্ষমতা দিয়ে কাজটা কতটা মনোগ্রাহী করা যেতে পারে তাইই প্রতিনিয়ত ভেবে চলেছে অ্যামেজ অ্যান্টজ।

আগামী পাঁচ বছরে এই সংস্থা বৃহত্তর বাজারে নিজেদের নিয়ে যেতে মরিয়া। ব্যবসার পরিধি আরও বাড়াতে খুর ঠুকছে রীতিমত। অতনু ইমরানরা বলছিলেন ওদের অর্থ চাই, জনবল চাই আর চাই বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এগোনোর মত মসৃণ পথ। ইতিমধ্যেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টেন্ট রূপেন রায়। যে ১০০টি বাছাই করা সংস্থাকে রূপেনবাবুর সংস্থা সুমন্ত্রণা ইনকিউবেট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে অ্যামেজ অ্যান্টজও। পাশাপাশি আইআইএম কলকাতার ইনোভেশন পার্কও সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যামেজ অ্যান্টজকে ইনকিউবেশনের বিশেষ সুযোগ দেবে।