ডায়াল করলেই হাজির সাকেতের কেজো 'জিনি‍'

ডায়াল করলেই হাজির সাকেতের কেজো 'জিনি‍'

Saturday February 27, 2016,

3 min Read

পার্কসার্কাসের অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় একটি নামী বেসরকারি সংস্থার উচ্চপদে কাজ করেন। স্ত্রীও তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। একমাত্র ছেলে অধিরাজের স্কুলের ফি দেওয়াটাই প্রতি মাসে মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াত মুখোপাধ্যায় দম্পতির। কারণ অনলাইনে বা ব্যাঙ্কে চেক ফেলে নিষ্কৃতি পাওয়ার অবকাশ ছিল না। রীতিমতো লাইনে দাঁড়িয়ে স্কুল-ফি দিতে হত। একে তো সময়ের অভাব। তার ওপর অফিস স্কিপ করে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হত না। একদিন হঠাৎ আলাদিনের আশ্চ‌র্য ‘প্রদীপ’ হাতে পেলেন তাঁরা। প্রদীপ ঘষে নয়, একটা নম্বর ডায়াল করতেই জিনি হাজির। আর সেই জিনিই সমস্যা মিটিয়ে দিল অরবিন্দবাবুর।

image


কোনও গল্পকথা নয়। কলিযুগে সাক্ষাত জিনির সন্ধান পেতে পারেন আপনিও। ৯০৮৮১৮১১৮১ ডায়াল করে গেট মাই জিনি বললেই আপনার জিনি হাজির হয়ে যাবে। আচমকা বাড়িতে বন্ধুরা চলে এল। প্রিয় ডিশটা অর্ডার দিতে চান কিন্তু হোম ডেলিভারি দেয় না হোটেল। কিংবা শপার্স স্টপে কোনও পোশাক এক্সচেঞ্জ করতে হবে আজই। কিন্তু আপনার সময় নেই। সমস্যার সমাধান করে দেবে গেট মাই জিনি। এই অসাধারণ স্টার্টআপ সাকেত ভুকানিয়ার মস্তিষ্কপ্রসূত।

আসানসোলের মারোয়ারি পরিবারে জন্ম আর বেডে় ওঠা। ভুকানিয়া পরিবারও আর পাঁচটা মারোয়ারি পরিবারের মতো ব্যবসাদার। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ার সুবাদে স্কুল কলেজের পর পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেওয়াই সহজ কেরিয়ার অপশন ছিল সাকেতের কাছে। কিন্তু তিনি অন্যভাবে ভেবেছিলেন। আর সেই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে বাবা-মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে কলকাতায় পা়ড়ি দেন। কলকাতায় এসে নামী কলেজ থেকে স্নাতক হন। পকেটমানির জন্য যোগ দেন উইপ্রোর বিপিওতে। কলকাতায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন সাকেত। বিপিওর এলোমেলো শিফটে খাবারের ঠিকঠিকানা থাকে না। ঘরের কাজ করার জন্য একজন লোক রাখলেন। বিজয়। ওই বিজয়ই বলতে গেলে জিনি‍র প্রোটোটাইপ। একা হাতে যেভাবে ব্যাচেলর্স রুম সামলাতেন বিজয়, সাকেতের বন্ধুরা দেখত আর জ্বলত। আর সেখান থেকেই গেট মাই জিনি কনসেপ্টের সূত্রপাত। অনলাইন মানুষের অনেক পরিশ্রমই লাঘব করেছে। কিন্তু ‌প্রযুক্তির পরিষেবায় কখনও উষ্ণতার স্পর্শ থাকে না। এই উষ্ণতার ছোঁয়াই সাকেত দিতে চেয়েছিলেন গেট মাই জিনি‍র মাধ্যমে। আলাদিনের আশ্চ‌র্য প্রদীপের জিনি থেকেই এই নাম।

হাউসিং ডট কমে কাজ করার সময় বিজয় শর্মার সঙ্গে পরিচয় হয় সাকেতের। বন্ধুত্ব গাঢ় হওয়ার পর নিজের আইডিয়া বিজয়কে বলেন সাকেত। বিজয়ই সাকেতের কনসেপ্টকে বাস্তব রূপ দিতে সাহায্য করেছিলেন। প্রত্যেক সফল পুরুষের পিছনে একজন মহিলা থাকেন--- প্রাচীন এই প্রবাদ সাকেতের জীবনেও সত্যি। ইনি অনিন্দিতা হালদার। আর রয়েছেন বিশাল হেলা। ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে জোরকদমে কাজ শুরু হয় গেট মাই জিনি‍র। আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে এবছর জানুয়ারিতে। চারজন মিলে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। কিন্তু গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে ইতিমধ্যেই ২৫ জন কর্মী নিয়োগ করেছেন ওঁরা। তাতেও চাহিদা মেটাতে নাজেহাল হচ্ছেন সাকেত টিম।

প্রত্যেক ব্যস্ত শহরবাসীর কাছে পার্সোনাল অ্যাসিসটেন্ট পৌঁছে দেওয়ার টার্গেট নিয়েই এই অভিনব স্টার্টআপটির গোড়াপত্তন। অদূর ভবিষ্যতে কলের মিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ান, এমনকী এসির মেকানিকের প্রয়োজনীয়তা চোখর পলকে মেটাতে চান সাকেতরা। “ আপাতত কলকাতায় কাজ শুরু করেছি। প্যান ইন্ডিয়া আর গ্লোবাল মার্কেটে পৌঁছানো লক্ষ্য। প্রতিবন্ধকতা লগ্নি। নাহলে ব্যবসায় নামার আগে এত দ্রুত গেট মাই জিনির চাহিদা বাড়বে তা আন্দাজ করতে পারিনি। মাত্র দেড় মাসেই কর্পোরেট ক্লায়েন্টের সংখ্যা কুড়ি। ইন্ডিভিজুয়াল ক্লায়েন্টও নেহাত কম নয়। কিছুদিনের মধ্যে অ্যাপ চলে আসবে বাজারে।” বলছিলেন সাকেত।

অভিনব এই কনসেপ্ট ক্লিক করেছে রাইজ আলফা-তেও। মে মাসে হংকংয়ে আয়োজিত বিশ্বের অন্যতম বড় এই স্টার্টআপ প্ল্যাটফর্মে কলকাতার প্রথম স্টার্টআপ হিসেবে জায়গা পেয়েছে গেট মাই জিনি। সেখানে স্বীকৃতি পেলে আর লগ্নির চিন্তা করতে হবে না সাকেতদের। কিন্তু ‌যাতায়াতের খরচও নেহাত কম নয়। তার আগের দু‍মাস অবশ্য দাঁত চেপে লড়াইয়ের সময়।

আরও পড়ুন

পিকজি-র বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কলকাতায়