সদ্য মা বাবাদের নিশ্চিন্তের জায়গা ‘বেবিচক্র’

সদ্য বাবা-মা হওয়ার টিপস থেকে শুরু করে বাচ্চাদের ডাক্তারের নানা সন্ধান এবং অবশ্যই প্রয়োজনীয় নানা জিনিসের সম্ভার নিয়ে হাজির ‘বেবিচক্র’। আপাতত মুম্বইয়ে কাজ শুরু করেছে তারা। এর সহপ্রতিষ্ঠাতা নাইয়া সাজ্ঞির মুখোমুখি ইয়োরস্টোরি।

সদ্য মা বাবাদের নিশ্চিন্তের জায়গা ‘বেবিচক্র’

Sunday October 04, 2015,

4 min Read

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ। ন্যাশনাল ল’ স্কুল থেকে ডিগ্রি। চাকুরির জগতে যথেষ্ট উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ছিল নাইয়া সাজ্ঞির। কিন্তু মনের ইচ্ছে অন্য কিছুই ছিল। সব বন্ধুবান্ধবরা তখন সদ্য বাবা-মা হতে শুরু করেছেন। নানা ব্যাপারে তাঁদের নানা জিজ্ঞাসা, নানা আগ্রহ। কিন্তু কোথায় গেলে যে তার সমাধান মিলবে, তা কেউ জানে না। ফেসবুকে যদিও অনেক গ্রুপ রয়েছে, কিন্তু তারা খুব একটা সংগঠিত নয়। এই চাহিদা দেখেই নাইয়া খুললেন ‘বেবিচক্র’। প্রায় ২০০০ কোটি ডলারের মার্কেট সেখানে। এমন এক ওয়েবসাইট, যেখানে রয়েছে সদ্য বাবা-মা হওয়ার টিপস থেকে শুরু করে বাচ্চাদের ডাক্তারের নানা সন্ধান এবং অবশ্যই প্রয়োজনীয় নানা জিনিস।


image


নাইয়ার মুখোমুখি হল ‘ইয়োরস্টোরি’

ইয়োরস্টোরিঃ হঠাৎ ‘বেবিচক্র’ শুরু করলেন কেন?

নাইয়াঃ প্রযুক্তি তো কতকিছুই বদলে দিয়েছে। খাবারের সন্ধান থেকে শুরু করে, বাসস্থান কিংবা ভ্রমণের খুঁটিনাটির সন্ধান সবই বর্তমানে অনেক সহজ হয়েছে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে। তাই ভাবলাম, সদ্যোজাত শিশুদের এবং তাদের বাবা-মাদের নিয়ে কিছু চিন্তাভাবনা করা উচিৎ। তাই ‘বেবিচক্র’। ইতিমধ্যেই তিনকোটি মায়েরা লাভবান হয়েছেন ‘বেবিচক্রের’ মাধ্যমে। ডাক্তার, হাসপাতাল, ‘কর্ডব্লাড ব্যাঙ্ক’, ‘প্লেস্কুল’, শিশুদের ব্যবহার্য নানা জিনিস, সব কিছুরই খোঁজ রয়েছে সেখানে। এখনও পর্যন্ত দু’লক্ষেরও বেশি সার্ভিস দিয়েছি আমরা।

তিন মাস আগে আমরা মুম্বইয়ে ‘বেবিচক্র বেটা’ চালু করেছি। এখনও পর্যন্ত দশহাজারেরও বেশি মানুষ ওয়েবসাইটটি দেখেছেন। ৮০০’রও বেশি সার্ভিস দিচ্ছি আমরা। বাবা-মাদের জন্য প্রয়োজনীয় ২৫০-রও বেশি বিভিন্ন বিষয়ে লেখা রয়েছে।

ইয়োরস্টোরিঃ নিজের জীবনের কোনও ঘটনা কি ‘বেবিচক্র’ শুরুর পিছনে রয়েছে?

নাইয়াঃ এক্ষেত্রে দুটো ব্যাপার আপনাকে জানাতে পারি। এক :আমার বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ট বন্ধু সদ্য বাবা-মা হয়েছেন। সবাই এখন ছোট ছোট পরিবারে বাস করেন। সংসারে এমন কেউ নেই, যাঁরা তাঁদের সঠিক দিশা দেখাবেন । দুই :তাঁদের মনে নানা প্রশ্ন। ডাক্তার থেকে শুরু করে কীভাবে সদ্যজাতকে যত্ন করতে হয়, প্লেস্কুলের খোঁজ ইত্যাদি। বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে, যেখানে এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে ফারাক অনেক। সঠিক কোনও ওয়েবসাইট নেই যেখানে একসঙ্গে সব তথ্য রয়েছে। ‘বেবিচক্র’ এই অভাবটাই মেটাতে চেয়েছে।

ইয়োরস্টোরিঃ এতগুলো টাকার ব্যবসা ঠিক কী ভাবে কাজ করে?

নাইয়াঃ আমাদের কাজের বেশিরভাগটাই নির্ভর করে আমাদের সার্ভিসের ওপর। ডাক্তার, প্লেস্কুল, বাচ্চাদের দেখাশুনার সমস্ত নির্দেশ কিংবা উপকরণ, সবই বাবামায়েরা পেয়ে যাচ্ছেন ‘বেবিচক্র’ থেকে। তারা ওয়েবসাইট দেখে অন্যান্যদের রিভিউ পড়তে পারেন, তাঁদের কাছ থেকেই মতামত নিতে পারেন। এছাড়াও আমাদের নিজস্ব বিশেষজ্ঞ তো আছেনই। আমাদের সার্ভিসের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব বিশ্বাসযোগ্যতা।


image


ইয়োরস্টোরিঃ কীভাবে ‘বেবিচক্র’ তৈরি হল?

নাইয়াঃ ‘বেবিচক্র’ শুরু করার আগে আমি এবং আমার সহপ্রতিষ্ঠাতা ৬০০ জন বাবামায়ের সঙ্গে কথা বলেছে। প্রায় ২০০ সার্ভিস ম্যাপ তৈরি করেছি। যাতে একটা ধারণা হয় কীভাবে কাজটা শুরু করা সম্ভব। এছাড়াও কিছু বিখ্যাত ব্র্যান্ড এবং বিপণনী সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি আমাদের প্রোডাক্ট নিয়ে। আমাদের সাইটটা শুরু করার তিনদিন আগে থেকেই প্রায় ৯০জন ‘সাইন-আপ’ করে রেখেছিলেন। অর্থাৎ তাঁরা আমাদের সার্ভিস পেতে উদগ্রীব। এই ৯০জনের মধ্যে শুধুমাত্র মায়েরাই নন, বাবারাও ছিলেন।

ইয়োরস্টোরিঃ ‘বেবিচক্রের’ মতো আর কোন কোন সাইট রয়েছে? যেখান থেকে আপনি ‘বেবিচক্র’ খোলার তাগিদ অনুভব করেছেন?

নাইয়াঃ আমেরিকায় ‘আরবান সিটার’, ‘হুইস্প্রিং’ এবং ‘রেড ট্রাইসাইকেলের’ মতো সাইট রয়েছে। ভারতেও কয়েকটি সাইট রয়েছে, কিন্তু তার মধ্যে নতুনত্বের অভাব। ‘বেবিচক্র’ সেদিক দিয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। নতুনভাবে বর্তমান যুগের সঙ্গে মানানসই করে তৈরি করা হয়েছে।

ইয়োরস্টোরিঃ ভবিষ্যতে কীভাবে ‘বেবিচক্র’কে আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন?

নাইয়াঃ আপাতত মুম্বইতেই আমরা কাজ করছি। কিন্তু খুব শিগগিরিই সারা ভারতে আমাদের সার্ভিস দিতে পারব বলে আশা করছি। ‘ইকনমিক্স টাইমস’, ‘রেডিও মির্চি’, ‘স্টার্টআপ ইউকে’ আমাদের কাজ লোকসমক্ষে তুলে ধরেছেন। বিভিন্ন জায়গায় আমরা ইভেন্ট করি। সেখানে আমাদের ‘ইউজার্স’রা আমাদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন। বিখ্যাত খেলনা বিপণনী ‘হ্যামলেস’, ‘এমএন মেডিক্যাল’ আমাদের ব্যবসার অংশীদার হয়েছেন।

ইয়োরস্টোরিঃ কোনও অর্থসাহায্যের ব্যবস্থা করেছেন কী?

নাইয়াঃ আমরা ভারতে এবং আমেরিকায় বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা আমাদের লক্ষ্যের কথা তাদের বিস্তারিত বলেছি। আমরা ভাগ্যবান বেশ কয়েকজন নামজাদা লগ্নিকারি সংস্থার সাহায্য পেয়েছি। এছাড়াও ‘ডিজিটাল মিডিয়া জোন’-এর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।


image


ইয়োরস্টোরিঃ আপনার সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং দল নিয়ে কিছু বলুন।

নাইয়াঃ মিতেশ এবং আমি স্কুলের বন্ধু। মিতেশ ‘এসআরসিসি’র স্নাতক, দিল্লির ‘ফ্যাকালটি অফ ম্যানেজমেন্ট স্টাডিস’ থেকে এমবিএ করেছেন। মিতেশই ‘বেবিচক্রের’ সহপ্রতিষ্ঠাতা। এছাড়াও রয়েছেন আরও ছ’জন সদস্য। আমাদের সার্ভিস ঠিক ঠিক পৌঁছে দেওয়ার জন্য রয়েছেন একগুচ্ছ রকস্টার। আমাদের ওপর ভরসা রাখুন। আমরা লক্ষ লক্ষ বাবা-মাকে পথপ্রদর্শন করছি। আমাদের সহযোগিতা পেতে মেইল করুন ‘[email protected]’-এ।