শিক্ষার সংস্কৃতিই বদলে দেবে Techtud.com

শিক্ষার সংস্কৃতিই বদলে দেবে Techtud.com

Tuesday February 09, 2016,

3 min Read

সময়টা বদলাচ্ছে। চাকরি, কেরিয়্যার, মোটা মাইনের চেনা ছক ছেড়ে, স্বার্থপরতার ঘেরাটোপ পেরিয়ে সামাজিক উদ্যোগে সামিল হচ্ছে উজ্জ্বল ঝকঝকে মেধাবী নতুন প্রজন্মের একটা বড় অংশ। দেশের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে উচ্চ বেতনের চাকরির হাতছানি উপেক্ষা করে স্বাধীনভাবে গড়ে তুলছে নিজেদের সংস্থা, এমন সংস্থা যা সমাজের প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণের উদ্দেশ্যে কাজ করে।

image


এমনই এক সংস্থা পারফেক্ট টেকনোলজিস প্রাইভেট লিমিটেড। আইআইটি খড়গপুরে পড়তে পড়তেই কোম্পানিটি শুরু করেন প্রিতম প্রসূণ রণিতা বিশ্বাস। তথ্য-প্রযুক্তিকে সাধারণের শিক্ষার কাজে লাগানোই উদ্দেশ্য। “ডিজিটাল ও তথ্য-প্রযুক্তি বিপ্লব সাধারণ জীবনকে প্রভাবিত করছে। হাতে হাতে ঘুরছে স্মার্ট ফোন। ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজার আগে আমরা ফেসবুক দেখি। অথচ শিক্ষা ক্ষেত্রে এর তেমন ব্যবহার নেই। ভারতে এখনও নিরক্ষরের সংখ্য সব থেকে বেশি। যারা ডিগ্রি প্রাপ্ত তারাও নিজেদের সঠিক দক্ষতা ও ক্ষমতা সম্পর্কে অজ্ঞ। আমাদের সংস্থান কম, আর জনসংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। তাই আমরা ক’জন আইআইটিয়ান মিলে ঠিক করি এমন একটা কিছু করতে হবে, যাতে আমাদের সংস্থানটুকু নিয়েই তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে এমন কিছু একটা করতে হবে যা শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে পারবে, ফেসবুকে যে ধরণের আদান প্রদানের জায়গা রয়েছে সেই রকম সহজেই আদান প্রদানের মাধ্যমে যে কেই যাতে শিক্ষা দান বা গ্রহণ করতে পারে সেটাই ছিল উদ্দেশ্য”, বললেন রণিতা।

এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই বছর দুয়েক আগে শুরু Techtud.com, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়াদের জন্য অ্যাকাডেমিক সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। GATE(CSE)-14 পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি টেস্ট সিরিজ লঞ্চের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল যাত্রা। মূলতঃ জুনিয়রদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সাহায্য করার জন্যই শুরু করা, তবে প্ল্যাটফর্মে জনপ্রিয়তা ও চাহিদা প্রতিষ্ঠাতাদের বিষয়টিকে আরও বড় করে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। “আমরা এমন একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে উদ্যোগী হই যা আইআইটির মত প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির সঙ্গে অন্যান্য কলেজগুলির একটা সেতুবন্ধনের কাজ করবে, শিক্ষাক্রম ও প্রজেক্টে সাহায্য করবে”, বলছিলেন রণিতা। এরপরই লঞ্চ হয় techtud.com। সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই নাম নথিভুক্ত করা যায় এই মঞ্চে, তবে কখনও নিজের জ্ঞান ও জানাকে অন্যেক সঙ্গে আদান প্রদান করে নেওয়ার অনুরোধ করা হয় গ্রাহকদের। সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার সংস্কৃতিটাকে বদলানোই উদ্দেশ্য রণিতাদের, বললেন, “আর্থিক লাভ নয়, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানরা নিজেদের মধ্যে জ্ঞান আদান প্রদানের মাধ্যমে একে অন্যকে সমৃদ্ধ করবে”।

শুরুটা হয়েছে কম্প্যুটার সায়েন্স দিয়ে, তবে অন্যান্য শাখার বিশেষজ্ঞ ও ছাত্রছাত্রীদেরও নিজেদের প্ল্যাটফর্মে চাইছেন তাঁরা। টেকটুডের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের একই পরিষেবা দেওয়ার জন্য তাঁরা তৈরি করেছেন ত্বরণ। মূলত প্রান্তিক এলাকার দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদেরই এই পরিষেবা দিতে চান তারা। বর্তমানে দুটি সরকারি স্কুলের সঙ্গে কাজ করছে ত্বরণ। আইআইটি খড়গপুরের প্রাক্তনীদের যে অনলাই নেটওয়ার্ক তাও তৈরি করেছে এই টিম।

ই কমার্স প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক এবং পেশাদার নেটওয়ার্কগুলির বৃদ্ধিই তথ্য, আদান-প্রদান ও ইন্টারনেটের শক্তি নিয়ে ভাবিয়েছিল রণিতাদের। উইকিপিডিয়ার মত অনুদানকেন্দ্রিক নলেজ হাব এবং ফেসবুকের মত সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মই ছিল অনুপ্রেরণা।

তাঁদের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য টিমের সদস্যদের আর্থিক স্থিতি আনা খুবই জরুরি মনে করেন প্রতিষ্ঠাতারা। মূল উদ্যোগ যেহেতু সামাজিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে তৈরি তাই উদ্যোগকে টিকিয়ে রাখতে পাশাপাশি কিছু ব্যবসায়িক কাজও তাঁদের করতে হয় বলে জানালেন রণিতা।

টেকটুডের বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা দশ হাজারের বেশি, ফেসবুক পেজে ছয় হাজারের বেশি লাইক ও ইউটিউব চ্যানেলে দশ হাজারের এর বেশি সাবস্ক্রাইবার।

নানা সরকারি ও বেসরকারি জায়গায় স্বীকৃতিও পেয়েছে তাঁদের এই উদ্যোগ, জানালেন রণিতা, বললেন, “আমরা আজ যে জায়গায় পৌঁছেছি তাতে এটাই প্রমাণ হয় যে আমরা ঠিক রাস্তাতেই এগোচিছ. খুব তাড়াতাড়িই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতিটি শাখায় কাজ শুরু করতে চাই আমরা। সবধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক ও গবেষকদের এই প্ল্যাটফর্মটিতে নিয়ে আসতে চাই আমরা যাতে তাঁরা নিজেদের মধ্যে আদান প্রদানের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেন। ত্বরণে আর্থিকভাবে দুর্বল, প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার ছাত্রছাত্রীদের পরিষেবা দিতে চাই আমরা”।

ত্বরণের ওয়েবসাইটটি কিছুদিনের মধ্যেই কার্যকরী হবে, আপাতত স্কুল এবং শিক্ষকদের নিযুক্ত করার কাজ চলছে জোর কদমে। রণিতা বললেন, “কঠোর পরিশ্রমই মূলমন্ত্র, নিজের পছন্দের জিনিস পাওয়ার জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম, নাহলে যা পাবে সেটাকেই পছন্দ করে বাঁচতে হবে”।