মাদকের বিরুদ্ধে সোনাগাছির যৌনকর্মীদের জেহাদ

মাদকের বিরুদ্ধে সোনাগাছির যৌনকর্মীদের জেহাদ

Monday October 05, 2015,

3 min Read

রাত হলেই এখানে ব্যস্ততা বাড়ে। রাত যত বাড়ে ততই বিভিন্ন শ্রেণির লোকের গোপন আনাগোনা। জায়গাটা মধ্য কলকাতার সোনাগাছি। যা এশিয়ার সবচেয়ে বড় যৌনপল্লি বলে মনে করা হয়। সোনাগাছিতে দেহব্যবসা নতুন কিছু নয়। ঠিক যেভাবে পৃথিবীর সব শহরেই এই ব্যবসা বহু কাল ধরে চলে আসছে। কিন্তু সব যৌনকর্মীর জন্যই বিপদটা একই ধরনের। সেটা হল মারাত্মক যৌনরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা।

image


AIDS ও HIV-র সংক্রমণ আটকাতে কয়েক বছর ধরে কাজ করে চলেছে দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি। যৌনকর্মী ও কাস্টমারদের সচেতনতা বাড়াতে বছরভর চলতে থাকে বিভিন্ন কর্মসূচি। এবার মাদকের বিরুদ্ধেও সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে দুর্বার। দেখা গিয়েছে কাস্টমার ও যৌনকর্মীদের একাংশ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। এই প্রবণতা বেড়েই চলেছে। তা ঠেকাতেই তাদের এই পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন দুর্বারের দায়িত্বে থাকা ভারতীদেবী।

পশ্চিমবঙ্গের প্রায় এক লক্ষ তিরিশ হাজার যৌনকর্মীর পাশে দাঁড়িয়ে উন্নয়নমূলক কাজ করে দুর্বার। যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েদের সুস্থ জীবনযাপনের জন্যও নেওয়া হয়েছে বহু উদ্যোগ। কিন্তু মাদকের বিরুদ্ধে জেহাদ কেন? ভারতী দেবী বলেন," এমন নয় যে সোনাগাছির সব যৌনকর্মীই নিয়মিত মাদক নিয়ে থাকেন। একটা ছোট অংশই মাদকে আসক্ত। কিন্তু যে কাস্টমাররা আসে তাদের একটা বড় অংশই নানা ধরনের মাদকের শিকার। তাই আমরা মনে করলাম, শুধু যৌনকর্মী নন, একটা সচেতনতামূলক প্রচার চালাতে পারলে কাস্টমারদের মধ্যেও মাদকের ব্যবহার কমানো যেতে পারে।" সেই লক্ষ্যেই International Day against Drug Abuse and Illicit Trafficking পালন করে থাকে দুর্বার।

দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন চিকিৎসক প্রমিত রায়। সোনাগাছির বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়টি দেখে থাকেন তিনি। যৌনরোগ এড়াতে কন্ডোমের ব্যবহারের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হলেও একশ্রেণির কাস্টমার তা মানতে চান না। বিশেষ করে সেই ধরনের কাস্টমার যারা নিয়মিত মাদকে আসক্ত। বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রমিতবাবু বলেন," এখানে যে সব লোক আসেন তাদের একটা অংশ ব্রাউন সুগার, হেরোইনে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। যৌনকর্মীরা বারবার বললেও তারা কন্ডোম ব্যবহার করতে চায় না। আসলে মাদকের ঘোরে থাকায় যৌনরোগ সংক্রমণের ব্যাপারটা তারা বুঝতেই পারেন না। এই unprotected sex যৌনকর্মী এবং কাস্টমার, দু'জনের জন্যই সমান ভয়ের ব্যাপার। HIV সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েই যায়। রেডলাইট এরিয়ায় লক্ষ্য করে দেখেছি ইঞ্জেকশন বা সূচের মাধ্যমে যে সব কাস্টমার মাদক নিয়ে থাকেন তাদের থেকেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এইচআইভি ছড়ায়। সংক্রমণে সেটাও একটা কারণ।" আবার এই শ্রেণির কাস্টমারদের দেখাদেখি ও সহজলভ্যতার কারণে যৌনকর্মীদের সন্তানরাও অল্প বয়সে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। সেটা আর একটা বিপদ। সেইসব অল্পবয়স্কদেরও চিকিৎসা করে থাকেন প্রমিতবাবু।

মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনে (rehabilitation) একটি NGO চালান তমিস্রাজিৎ ব্যানার্জী। এইসব মাদকাসক্তদের একাংশ নিয়মিত যৌনপল্লীতে গিয়ে থাকেন। তমিস্রাজিৎও মনে করেন যৌনরোগের বিপদ এড়াতে মাদক ব্যবহারের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানো খুবই জরুরি। এই ধরনের প্রচার যৌনকর্মী এবং কাস্টমার, দু'জনকেই অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারে। "আমি এমন অনেক পেশেন্ট দেখেছি যারা মাদকে আচ্ছন্ন থাকার ফলেই যৌনপল্লীতে যায়। আবার অন্য একটা কারণও রয়েছে। মাদকের জন্য অনেক টাকা লাগে। সেই টাকা জোগাড় করতেই তারা যৌন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তাই এ ধরনের সচেতনতা অভিযানে সুফল মিলবে বলেই মনে করি", বললেন তমিস্রাজিৎ। বাস্তবে তা করেও দেখাতে পেরেছে তার এনজিও। মাদকের কবল থেকে অনেককেই সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন তারা।